Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

দেহ গ্রামে পৌঁছতেই কান্নার রোল

ক’দিন ধরেই পরিবেশটা ছিল শোকাচ্ছন্ন, গুমোট। সোমবার ভোরে খড়্গপুর স্টেশন হতে পুলিশি ঘেরাটোপে গাড়িতে দেহগুলি চন্দ্রকোনা, গড়বেতার গ্রামে পৌঁছতেই থমথমে সেই আবহে উঠল সমবেত কান্নার রোল! এ দিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ চন্দ্রকোনার চালতাবাঁদি গ্রামে ছ’টি দেহ পৌঁছয়। ওই একই সময়ে গড়বেতার গ্রামে পৌঁছয় অপর তিন জনের দেহ। সেই সকালে দু’টি জায়গাতেই ছিল থিকথিকে ভিড়।

দেহগুলি সমাহিত করার প্রস্তুতি। রয়েছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।—নিজস্ব চিত্র।

দেহগুলি সমাহিত করার প্রস্তুতি। রয়েছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।—নিজস্ব চিত্র।

অভিজিত্‌ চক্রবর্তী
চন্দ্রকোনা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৪
Share: Save:

ক’দিন ধরেই পরিবেশটা ছিল শোকাচ্ছন্ন, গুমোট। সোমবার ভোরে খড়্গপুর স্টেশন হতে পুলিশি ঘেরাটোপে গাড়িতে দেহগুলি চন্দ্রকোনা, গড়বেতার গ্রামে পৌঁছতেই থমথমে সেই আবহে উঠল সমবেত কান্নার রোল!

এ দিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ চন্দ্রকোনার চালতাবাঁদি গ্রামে ছ’টি দেহ পৌঁছয়। ওই একই সময়ে গড়বেতার গ্রামে পৌঁছয় অপর তিন জনের দেহ। সেই সকালে দু’টি জায়গাতেই ছিল থিকথিকে ভিড়। ভিড় সামলাতে এলাকায় ছিল পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা। গড়বেতায় পরিস্থিতি সামাল দেন খোদ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। চন্দ্রকোনায় ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) অভিষেক গুপ্ত-সহ অন্য পুলিশ কর্তারা।

গত শুক্রবার রাতে ভেলোরের শিনগার্দ এলাকায় চামড়ার কারখানার দেওয়াল ভেঙে বিষাক্ত জলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গড়বেতার তিন যুবক এবং চন্দ্রকোনার ছ’জনের মৃত্যু হয়। শনিবার ভোরে এই দুঃসংবাদ গ্রামে পৌঁছতেই গ্রামের ছবিটা পাল্টে গিয়েছে। অনেকের বাড়িতেই চড়েনি হাঁড়ি। ভরসা পড়শিরাই। তাঁরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ওই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন।

এ দিন দুপুর একটা নাগাদ চালতাবাঁদি গ্রামে পৌঁছন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, পরিষদীয় সচিব শঙ্কর দোলই, প্রদ্যোত্‌ ঘোষ, সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, কর্মাধ্যক্ষ জয় রায়, বিধায়ক ছায়া দোলই ও মমতা ভুঁইয়া। এলাকায় যান ঘাটালের মহকুমাশাসক রাজনবীর সিংহ কাপুর, বিডিও থেকে প্রশাসনের বহু কর্তাব্যক্তিরা। যদিও ভোরেই গ্রামে পৌঁছে পুলিশের সঙ্গে ভিড় সামলাতে দেখা গিয়েছে শাসক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের। ছিলেন দুর্গাশঙ্কর পান, শিবরাম দাস, গৌতম ভট্টাচার্য, সুজয় পাত্র, সুদীপ মণ্ডল-সহ মহকুমার অন্য নেতারাও। তবে জেলা সভাপতির নির্দেশে ওই দু’টি গ্রামে দলীয় পতাকা টাঙানো হয়নি।

মন্ত্রী গ্রামে গিয়ে স্বজনহারানো পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন। মন্ত্রীকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে জেনেখা বিবিকে বলতে শোনা যায়, ‘স্বামী, দুই ছেলেই চলে গিয়েছে। সংসারটাই শেষ হয়ে গেল!’ পরে পুরমন্ত্রী দুর্ঘটনায় মৃত অন্যদের বাড়িতেও যান। পুরমন্ত্রী আশ্বাস দেন, “সরকার প্রতিটি পরিবারের পাশে থাকবে। আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে রাজ্য সরকার তামিলনাড়ু সরকার ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে কথা বলবে।” পরে দুপুর দু’টো নাগাদ গড়বেতার বলরামপুরে যান তৃণমূল নেতারা।

এ দিন দুপুরে নিয়ম মেনে দেহগুলি সমাধিস্থ করা হয়। গড়বেতাতেও হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ভিড় সামলাতে দুই গ্রামেই প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE