পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করল নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৫ এপ্রিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক, কাঁথি ও এগরা পুরসভায় ভোটগ্রহণ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। একই দিনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই, রামজীবনপুর ও খড়ার পুরসভাতেও ভোটগ্রহণ করা হবে। আগামী জুন মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি পুরসভা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই ছ’টি পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। গত বছরের অগস্টে এগরা পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভোট না হওয়ায় অগস্টের পর থেকে পুর প্রশাসকের হাতে ওই পুরসভা পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার থেকেই প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র তুলতে ও জমা দিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৫ মার্চ। আগামী ২৫ এপ্রিল ভোটগ্রহণ করা হবে। জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মোট পাঁচটি পুরসভা রয়েছে। তার মধ্যে তমলুক পুরসভার ২০টি, কাঁথি পুরসভার ২১টি এবং ইতিমধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া এগরা পুরসভার ১৪টি ওয়ার্ডে একই দিনে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগেই ওই তিন পুরসভার মহিলা ও তফশিলি আসন সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক ও এগরা পুরসভায় ওয়ার্ডের সংখ্যা এক থাকছে। যদিও কাঁথি পুরসভায় গত বারের থেকে একটি ওয়ার্ড বেড়ে ২১টি হয়েছে। অন্য দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের ১৭টি, চন্দ্রকোনার ১২টি, রামজীবনপুরের ১১টি, খড়াড়ের ১০টি ও ক্ষীরপাইয়ের ১০টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ হবে।
তমলুক ও কাঁথি পুরসভায় বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। এগরা পুরসভাতেও ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। গত পুরভোটে তমলুকে ১৪টি আসনে জিতে পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। কাঁথির পুরসভার সবক’টি ওর্য়াডই ছিল তৃণমূলের দখলে। এগরা পুরসভায় প্রথমে তৃণমূল ও কংগ্রেস যৌথভাবে পুরবোর্ড পরিচালনা করলেও পরে চেয়ারম্যান-সহ তিন কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এককভাবে বোর্ড পরিচালনা করেছিল তৃণমূল। পশ্চিম মেদিনীপুরের যে ৬টি পুরসভায় ভোটগ্রহণ হবে, তার মধ্যে এক মাত্র খড়্গপুর পুরসভা কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। বাকি ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভাই তৃণমূলের দখলে রয়েছে।
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হলেও তিন পুরসভাতেই এখনও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি কোনও রাজনৈতিক দল। এ দিন বিজ্ঞপ্তি জারির পর অবশ্য সব দলই নড়েচড়ে বসেছে। প্রার্থী তালিকা সংক্রান্ত আলোচনা দ্রুত সারতে উদ্যোগী হয়েছে। তবে প্রার্থী তালিকা ছাড়াই অনেক জায়গাতেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচার। এ দিনই তমলুক পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় নিজের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দেওয়াল লিখন শুরু করেছে। রাজ্যে পালাবদলের পর তিন বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। তাই পুর নির্বাচনে উন্নয়নকে মূল অস্ত্র করেই ময়দানে নামতে চাইছে শাসক দল। এ বার পুরসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য প্রার্থী তালিকা তৈরি নিয়ে তৃণমূল কিছুটা এগিয়ে থাকলেও তমলুক পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী বাছাই এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
আর এগরা পুরসভার একটি ওয়ার্ডে প্রার্থী বাছাই বাকি রয়েছে। তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সবাপতি শিশির অধিকারী বলেন, “জেলার তিনটি পুরসভাতেই আমাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদনের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।”
অন্য দিকে, বিরোধী বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। সিপিএম, সিপিআই,ফরওয়ার্ড ব্লক, ডিএসপি, এসপি ছাড়াও এ বার নির্বাচনে আরএসপি-কে আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, “তমলুক পুরসভায় সিপিএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, এসপি ছাড়াও এ বার আরএসপি একটি আসনে লড়াই করবে। কাঁথি পুরসভাতেও আরএসপি-কে একটি আসন ছাড়া হয়েছে। এগরা পুরসভায় সিপিএম ৭টি আসনে, সিপিআই ও ডিএসপি ৩টি করে আসনে ও এসপি একটি আসনে লড়াই করবে। দলীয়ভাবে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা চলছে।”
বুধবার পর্যন্ত কেন কোনও রাজনৈতিক দল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারল না? বিভিন্ন দল সূত্রে খবর, সব দলই কিছু না কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে আলোচনা এগোচ্ছে। রেলশহরে ৯টি আসনে প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে জট না কাটায় তালিকা প্রকাশ করা যায়নি বলে খবর। একই সমস্যা রয়েছে চন্দ্রকোনা, খড়ারে। এক সময় রামজীবনপুরে বামেদের বিরুদ্ধে মহাজোট করেছিলেন তত্কালীন বিরোধীরা। এখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের মহাজোট হতে পারে।
প্রার্থী তালিকা প্রকাশে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ও বলেন, “স্থানীয়স্তরে আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে। দ্রুতই তালিকা প্রকাশ হবে।” শীঘ্রই প্রার্থী তালিকাপ্রকাশ হবে বলে জানা বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ও।
ঘাটাল-চন্দ্রকোনায় যে ভাবে ইতিমধ্যে প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তৃণমূলেরই একাংশ নেতৃত্ব। তাঁদের আশঙ্কা, বিক্ষুব্ধরা নির্দল প্রার্থী কিংবা গোঁজ প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারেন। ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলুই অবশ্য বলেন, “বিক্ষিপ্ত অসন্তোষ থাকতে পারে। তেমন কিছু নয়! ওয়ার্ড স্তরে আলোচনা করেই প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত অসন্তোষের প্রভাব পড়বে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy