দিঘায় গঙ্গা প্রতিমার আরাধনা। সোহম গুহর তোলা ছবি।
পৌষ সংক্রান্তিতে মকরের পুণ্য স্নানের জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভিড় জমল নদীর ঘাটে। শীত উপেক্ষা করেই এ দিন তমলুকে স্টিমারঘাটে ও কপালমোচন ঘাটে রূপনারায়ণে ডুব দিলেন কয়েক হাজার পুণ্যার্থী। দিঘা, শৌলা, মন্দারমনি, শঙ্করপুর, জুনপুট সৈকত ও খেজুরির রসুলপুর নদীতেও পূণ্যস্নানের জন্য ভিড় করেন বহু মানুষ। কাঁথি জানানো হয়েছে। মকর উপলক্ষে তমলুকের কপালমোচন ঘাটের কাছে বসেছে বারুণী মেলার আসর। মেলায় বিভিন্ন গ্রামীণ কুটির শিল্পীরা হরেক রকম মাটি, বাঁশ, বেত দিয়ে তৈরি ঘর সাজানোর সামগ্রী, খাবারের স্টল সাজিয়ে বসেছেন। তমলুক শহরের উত্তরচড়া শঙ্করআড়া এলাকার শান্তি সঙ্ঘের উদ্যোগে গঙ্গা পূজার আয়োজন-সহ বারুণী মেলা এ বার ৪৫ বছরে পা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মেলা কমিটির পক্ষ থেকে ‘বালুচর’ নামে স্মারক পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। মেলায় আসা লোকজনের ভিড় সামাল দিতে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ও মেলা প্রাঙ্গণে পুলিশ ও এনসিসি বাহিনীর পাশপাশি তমলুক পুরসভার তরফে স্বেচ্ছাসেবকও মোতায়েন করা হয়েছে। বারুণী মেলা কমিটির সভাপতি তথা স্থানীয় কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, “ঐতিহ্যবাহী কপালমোচন ঘাট ও রূপনারায়ণ নদীতে মকর স্নানের জন্য আসা পুণ্যার্থী-সহ প্রতি বছর মেলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। এ বারও মেলায় প্রচুুর মানুষের ভিড় জমেছে। সাত দিন ব্যাপী মেলায় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।”
শান্তি সঙ্ঘ ছাড়াও স্থানীয় উপলদ্ধি ক্লাব-সহ একাধিক সংস্থার উদ্যোগে গঙ্গাপূজা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে গঙ্গা মেলা শুরু হয়েছে হলদি নদীর তীরে নন্দকুমারের নরঘাটে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই মেলার উদ্বোধন করেন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুবাবু বলেন, “ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি সামাজিক কাজের মাধ্যমে মানুষের সেবা করা হয়। নিজেদের ধর্মের বাইরে যাঁরা অন্য ধর্ম পালন করেন, তাঁদের প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধা রাখতে হবে। এইসব মেলার মাধ্যমে মানুষের মিলন ঘটে থাকে।” এ দিন নন্দীগ্রামের বাসুলিচকে, সোনাচুড়ায় হলদি নদীর তীরে বাসুলিমাতার মন্দিরেও কয়েক হাজার পুণ্যার্থীর ভিড় হয়। হলদি নদীতে মকরস্নান সেরে মন্দিরে পূজা দেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পুণ্যার্থীরা। এই উপলক্ষে দু’জায়গাতেই মেলা বসেছে। এ দিন জেলার কোলাঘাট, জামিট্যা, খারুই, সোয়াদিঘি প্রভৃতি এলাকাতেও রূপনারায়ণ নদীতে মকরস্নান করেন বহু পুণ্যার্থী।
মকরের পুণ্যস্নান। মেদিনীপুরের কংসাবতীতে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
দিঘার সৈকতে ভিড় সামলাতে বিশেষ পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়াও স্থানীয় পদিমা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত, রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতি ও ডিএসডিএ-র পক্ষ থেকে খোলা হয় বিশেষ সহায়তা শিবির। শিবিরগুলিতে প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির, পানীয় জল-সহ বিভিন্ন পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়। মন্দারমনি, শঙ্করপুর, জুনপুট, শৌলা সর্বত্রই সমুদ্র সৈকতে বসে মকর মেলার আসরও। দিঘা মোহনা, শঙ্করপুর ও শৌলাতে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে এ দিন আয়োজন করা হয় গঙ্গোৎসবের। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে মঙ্গলবার থেকে দিঘা মোহনায় শুরু হয়েছে মৎস্যজীবীদের সপ্তাহব্যাপী গঙ্গোৎসব। গঙ্গোৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে ‘সি ফুড ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করা হবে। উদ্বোধন করতে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ দিঘা মোহনায় আসছেন বলেও উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy