Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
মিলল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন

স্থানীয়দের উদ্যোগে নন্দীগ্রামে নতুন কলেজ

স্বাধীনতার পনেরো বছর পরে ১৯৬২ সালে চালু হয়েছিল নন্দীগ্রামের প্রথম ডিগ্রি কলেজ। নন্দীগ্রাম বাজারের কাছে এই কলেজ তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। এলাকার দুই বাসিন্দা সীতানন্দ পাল ও আনন্দ মাইতির নাম অনুসারে কলেজের নাম হয় নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজ। প্রায় ৫৩ বছর পরে এ বার চালু হতে চলেছে নন্দীগ্রামের দ্বিতীয় কলেজ।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০০:৫৫
Share: Save:

স্বাধীনতার পনেরো বছর পরে ১৯৬২ সালে চালু হয়েছিল নন্দীগ্রামের প্রথম ডিগ্রি কলেজ। নন্দীগ্রাম বাজারের কাছে এই কলেজ তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। এলাকার দুই বাসিন্দা সীতানন্দ পাল ও আনন্দ মাইতির নাম অনুসারে কলেজের নাম হয় নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজ। প্রায় ৫৩ বছর পরে এ বার চালু হতে চলেছে নন্দীগ্রামের দ্বিতীয় কলেজ।

প্রস্তাবিত এই কলেজটির অবস্থান নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের আমদাবাদ ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার আমদাবাদ গ্রামে। ‘স্বর্ণময়ী যোগেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয়’ নামে এই কলেজ তৈরিতেও এগিয়ে এসেছেন এলাকার বাসিন্দারাই। আমদাবাদের বাসিন্দা তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী অমূল্যরতন ভৌমিকের পরিবারের উদ্যোগে এবং আরও কিছু পরিবারের দান করা প্রায় পাঁচ একর জমিতে মাথা তুলবে নন্দীগ্রামের এই ডিগ্রি কলেজ।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে নন্দীগ্রামে নতুন একটি কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।” উচ্চশিক্ষা দফতরের সম্মতি মিলেছে বলেও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর। উদ্যোগীদের আশা, নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই কলেজ চালু হবে।

নতুন কলেজ চালু হলে নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও নন্দীগ্রাম ১ ও খেজুরি ১ ব্লকের পড়ুয়াদের সুবিধে হবে। জানা গিয়েছে, নতুন শিক্ষাবর্ষে আমদাবাদ মধ্যপল্লি জুনিয়র হাইস্কুলের ভবনের একাংশে আপাতত কলেজের ক্লাস শুরু হবে। প্রথম বর্ষে বাংলা, ইংরাজি, সংস্কৃত, ভূগোল বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হবে। এ ছাড়াও শিক্ষাবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস বিষয়ে পাশ কোর্স চালু হবে।

জমিদাতা ভৌমিক পরিবারের অন্যতম সদস্য প্রয়াত প্রবোধকুমার ভৌমিক ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক। প্রবোধবাবুর পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে বড় ৯৭ বছর বয়সী অমূল্যরতনবাবু প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী, হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এক সময় সুন্দরবনে প্রচুর পারিবারিক জমি ছিল তাঁদের। পরিবার সূত্রে খবর, সুন্দরবনের পাঠানখালি কলেজ-সহ সেখানে একাধিক স্কুল গড়ায় অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন প্রবীণ এই স্বাধীনতা সংগ্রামী। প্রবোধবাবুর মেয়ে শমিতা মান্না পুরুলিয়ার সিধো কানু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা। পরিবারের সকলেই উচ্চ শিক্ষিত এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত বলে স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন।

নতুন কলেজ তৈরি প্রসঙ্গে প্রাক্তন উপাচার্য শমিতাদেবী বলেন, “পরিবারের সকলের উদ্যোগেই এই কলেজ। কলেজ চালু হয়ে গেলে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।” আমদাবাদ গ্রামে প্রস্তাবিত নতুন কলেজ গড়ার জন্য ভৌমিক পরিবার প্রায় ৪ একর ও গ্রামেরই বাসিন্দা গোপাল মূলা, শ্যামাপদ মূলা ও সুব্রত বেরার পরিবার প্রায় এক একর জমি দিয়েছেন। কলেজটির নামকরণ করা হয়েছে প্রবোধবাবুর মা স্বর্ণময়ী ভৌমিক ও বাবা যোগেন্দ্রনাথ ভৌমিকের নামে। ভৌমিক পরিবারের সদস্যদের উদ্যোগে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে এলাকায় নতুন কলেজ গড়ার উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৩ সালে। গত বছর রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর ওই কলেজ গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেয়। সম্প্রতি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ওই কলেজ চালুর বিষয়ে অনুমোদন মিলেছে।

এলাকার মধ্যপল্লি জুনিয়র হাইস্কুলের কাছে যেখানে নতুন কলেজটি হচ্ছে, সেখান থেকে নন্দীগ্রাম কলেজ প্রায় ১৬ কিলোমিটার, খেজুরি কলেজ প্রায় ১৯ কিলোমিটার, বাজকুল কলেজ প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। কলেজ গড়ার ব্যাপারে অন্যতম উদ্যোগী ভৌমিক পরিবারের সদস্য তথা বাজকুল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিন্দ্যকিশোরবাবু বলেন, “গ্রামে নতুন কলেজ তৈরির জন্য আমাদের পরিবার-সহ গ্রামের আরও তিন পরিবার মিলে প্রয়োজনীয় জমি দেওয়া হয়েছে। কলেজ চালুর জন্য রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতর ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন মিলেছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই কলেজ চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE