চলছে মারধর। বৃহস্পতিবার বহরমপুরে।
দু’দিন বন্ধ থাকার পর পুলিশি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি পেয়ে কলেজ খুলেছিল।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে বহরমপুর কলেজের গেট খুলতেই বাঁশ, লাঠি, রড নিয়ে হুড়মুড়িয়ে যারা ঢুকে পড়ে, শিক্ষকদের অধিকাংশই তাদের চিহ্নিত করেছিলেন বহিরাগত হিসেবে।
কলেজের বিভিন্ন ক্লাসের টেবিল, বেঞ্চ উল্টে, জানলার কাচ গুঁড়িয়ে, বাগান তছনছ করে, আধ ঘণ্টার মধ্যেই বহরমপুরের ওই সুসজ্জিত কলেজ ক্যাম্পাসের কার্যত যুদ্ধবিধ্বস্ত চেহারা করেছিল তারা। এখানেই না থেমে, কলেজ চত্বরে টিএমসিপি-র কর্মী-সমর্থকদের উপরেও লাঠি-বাঁশ নিয়ে চড়াও হয় তারা। বহিরাগতদের আক্রমণে গুরুতর জখম হন টিএমসিপি-র ৭ সমর্থক। শাসক দলের অভিযোগ, বহিরাগতদের নিয়ে ওই তাণ্ডব আদতে ছাত্র পরিষদের।
তাই ওই ‘বহিরাগত’রা ফিরে যাওয়ার পরেই সদলবল কলেজে চড়াও হয় তৃণমূল এবং তাদের ছাত্র সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, টিএমসিপি-র সমর্থকদের অনেকেরই লক্ষ্য ছিল কলেজের অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের একাংশ।
এই আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ পর্বের প্রায় ঘণ্টা খানেক পরে কলেজে আসে পুলিশ। ‘নিরাপত্তা’র আশ্বাস দিয়েও তাদের এই অনুপস্থিতির প্রতিবাদে শিক্ষকেরা জেলা পুলিশ কর্মীদের স্পষ্টই জানিয়ে দেন, ‘পুলিশের আর প্রয়োজন’ নেই।
কলেজের মধ্যে এই ছাত্র তাণ্ডবে তাঁর উদ্বেগ আড়াল করেননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের এই ভাবে মারদাঙ্গায় জড়িয়ে পড়া কাম্য নয়।” এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন বলে জানান পার্থবাবু। প্রয়োজনে সদ্য দলবদল করা প্রাক্তন সাংসদ তথা তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের সঙ্গেও এ দিনের ঘটনার নিয়ে কথা বলতে চান শিক্ষামন্ত্রী।
তবে স্থানীয় সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মনে করেন, ক্রমাগত শাসকদলের আক্রমণের বিরুদ্ধে এ দিন ‘প্রতিরোধ’ গড়ার ফলেই ওই ‘অস্থিরতা’। দিল্লি থেকে তিনি বলেন, “মার খেতে খেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ছাত্র পরিষদের ছেলেদের। তারই প্রতিরোধ করেছে তারা।” তবে, শিক্ষাঙ্গনে এই ধরনের তাণ্ডব যে তিনিও ‘পছন্দ’ করেন না, কবুল করেছেন তা-ও।
কিন্তু কেন এ দিনের গণ্ডগোল?
কলেজের নথি থেকে নতুন ছাত্রছাত্রীদের নাম, ঠিকানা জোগাড় করা নিয়ে টিএমসিপি-ছাত্র পরিষদ বিবাদ চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। তা নিয়ে নিত্য হাতাহাতিও চলছিল। এ দিনের গণ্ডগোলও তার জেরেই। তবে, ছাত্র তাণ্ডবের পাশাপাশি এ দিন পুলিশের ‘পক্ষপাতের’ অভিযোগ করেছে দু’পক্ষই। শিক্ষকদের নিরাপত্তা না-দেওয়ার সঙ্গেই জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছে শাসক দলের হয়ে তাঁবেদারি করার অভিযোগও।
বহরমপুর কলেজের অধ্যক্ষ সমরেশ মণ্ডল বলেন, “নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল পুলিশ। তা-ও ওঁরা এলেন ঘটনা মিটে যাওয়ার অনেক পরে।” দেরি করে পুলিশ আসায় আইসি অরুনাভ দাসের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কলেজের শিক্ষকরা। অভিযোগ, এই সময়ে এক শিক্ষককে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন ওই পুলিশ কর্তা। পুলিশের দেরি নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূলও। টিএমসিপি-র মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি রাজা ঘোষের অভিযোগ, “কংগ্রেস আক্রমণ করতে পারে আশঙ্কা করে পুলিশকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। অথচ পুলিশ এল এক ঘণ্টা পরে। ”
বিলম্বে এসেও তারা ‘বেছে বেছে’ ছাত্র পরিষদের সমর্থক এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা কংগ্রেসর দুই নেতা-নেত্রীর উপরে ‘চড়াও’ হন বলে জেলা কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ। জেলা মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসুমী বেগম বলেন, “প্রতি দিন ছাত্র পরিষদের ছেলেরা টিএমসিপি-র হাতে মার খাচ্ছে। এ দিন তারা পাল্টা প্রতিরোধ করেছে।” তিনি জানান, ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা আক্রান্ত হয়েছে শুনে কলেজে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “কিন্তু বহরমপুর থানার আইসি অকথ্য গালিগালাজ করে বাঁশ নিয়ে যে ভাবে আমাদের আক্রমণ করেন তা স্পষ্ট করে দিয়েছে পুলিশ দলদাস হয়ে গিয়েছে।” অধীর জানান, পুলিশের এই ব্যবহার নিয়ে তাঁরা পাল্টা অভিযোগ করতে চলেছেন। ওই পুলিশ কর্তা অবশ্য বলেন, “খবর পেয়েই কলেজে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আর পক্ষপাতের অভিযোগও ভিত্তিহীন।”
বৃহস্পতিবার ছবিগুলি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy