Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

যানজটে নিত্য নাকাল বগুলা, হেলদোল নেই প্রশাসনের

শহরের বুক চিরে চলে যাওয়া নোনাগঞ্জ থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত বগুলা-হাঁসখালি রাস্তাটি প্রয়োজনের তুলনায় সঙ্কীর্ণ। তার উপর সারাক্ষণ লেগে রয়েছে বাস-লরির ভিড়। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ম্যাজিক, ভ্যানো, লছিমন, টোটোর সংখ্যাও।

চেনা যানজট। বগুলাতে ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।

চেনা যানজট। বগুলাতে ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বগুলা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪৬
Share: Save:

শহরের বুক চিরে চলে যাওয়া নোনাগঞ্জ থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত বগুলা-হাঁসখালি রাস্তাটি প্রয়োজনের তুলনায় সঙ্কীর্ণ। তার উপর সারাক্ষণ লেগে রয়েছে বাস-লরির ভিড়। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ম্যাজিক, ভ্যানো, লছিমন, টোটোর সংখ্যাও। ফলে রাস্তায় পা রাখা দায় হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এই অবস্থায় অবিলম্বে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা বসিয়ে রাস্তার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে বগুলার জনসংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। এই ক’বছরে জনসংখ্যা আরও অনেকটাই বেড়েছে। তার উপর বগুলার প্রায় কুড়ি কিলোমিটারের মধ্যে তেমন কোনও বড় বাজার নেই। এক দিকে কৃষ্ণনগর জেলা সদর ও অন্য দিকে উত্তর ২৪ পরগনা সীমান্ত সংলগ্ন দত্তফুলিয়া বাজারের মাঝখানে একমাত্র বাণিজ্যকেন্দ্র বগুলা। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও প্রতিদিন আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার দশ হাজারেরও বেশি মানুষ আসেন বগুলায়।

নোনাগঞ্জ থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার ওই রাস্তার পাশে রয়েছে ৩টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, ৩টি প্রাথমিক স্কুল, ১টি নার্সারি স্কুল ও ১টি কলেজ। প্রতি দিন নিত্যযাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দার পাশাপাশি কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। তার উপরে মামজোয়ান, ট্যাংরাখাল, হাঁসখালি, রামনগর, গাঁড়াপোতা, পায়রাডাঙা-নোনাগঞ্জ, আড়ংঘাটা রুটের কয়েকশো অটো এই বগুলার উপর দিয়ে যাতায়াত করে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তাটি সঙ্কীর্ণ। তার উপর দিন দিন বাড়ছে অটো, রিকশা, ম্যাজিক ও অন্যান্য গাড়ির সংখ্যাও। বগুলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের পীযুষকান্তি কুণ্ডু বলেন, “সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই বিরাট সংখ্যক গাড়ির চাপ নিতে গিয়েই যেন যানজটে হাঁসফাঁস করে বগুলা।”

যানজটের পিছনে দোকানদারদের জবরদখলকেও দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। রাস্তার দু’দিকের দোকান যেন দিন দিন রাস্তার দিকে এগিয়ে আসছে। অনেকে আবার রাস্তার উপরে পসরা সাজিয়ে বসে পড়ছেন। ফলে রাস্তা আরও সঙ্কীণর্র্ হয়ে পড়ছে। এর আগে একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তার পাশের দোকানের এগিয়ে আসা অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবার সেই একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। ঠিক হয়েছিল রাস্তার দুই পাশে ফুটপাথ তৈরি হবে। কিন্তু সে সব কিছুই হয়নি। শুধু ক্রমবর্ধমান গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজট।

এলাকার বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের কর্মাধক্ষ্য শশাঙ্কশেখর বিশ্বাস বলেন, “নোনাগঞ্জ মোড়ের উপরেই বাসস্ট্যান্ড। ফলে সঙ্কীর্ণ রাস্তার দু’দিকে দীর্ঘ সময় ধরে বাস দাঁড়িয়ে থাকে। কোনও ট্রাফিক পুলিশ না থাকার কারণে সেই সঙ্কীর্ণ রাস্তা দিয়েই নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে যানবাহন চলে।” বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজের টিচার ইন-চার্জ অরুণকান্তি সাহা বলেন, “যানজটের কারণে প্রতিদিন এইটুকু রাস্তা আসতেই দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ফলে অনেক সময় শুধুমাত্র যানজটের কারণেই শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা সময় মতো স্কুল-কলেজে আসতে পারেন না।” তিনি আরও বলেন, “সঙ্কীণর্র্ রাস্তার জন্য নিত্য ছোটোখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। আমরা চাই দ্রুত এর একটা স্থায়ী সমাধান হোক।”

নিত্যযাত্রী বাদল ঘোষ বলেন, “যানজটের কারণে বেশির ভাগ দিনই নোনাগঞ্জ মোড় থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত আসতে ১৫-২০ মিনিট লেগে যায়। সময়ের অনেক আগে বাড়ি থেকে বেরতে হয়। জানি না এভাবে কত দিন আমাদের হয়রান হতে হবে।” পীযুষবাবু জানান, মাঝে মাঝে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে যানজট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রচার অভিযান চালানো হয়। রাস্তার পাশে শিবির করা হয়। কিন্তু যত দিন শিবির থাকে ততদিন যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরে আবার একই অবস্থায় ফিরে যায়। তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে একাধিকবার বৈঠক করেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।” জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “বগুলার যানজট সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সিভিক পুলিশের পাশাপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ-প্রাপ্ত পুলিশকর্মী নিয়োগ করা হবে। এছাড়াও স্কুল শুরু ও ছুটির সময়ে প্রতিটি স্কুলের সামনে পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

traffic jam bagula
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE