Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্বপনের পথে মামলার তোপ হুমায়ুনের

বহিষ্কারের চার দিনের মাথায় দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিলেন হুমায়ুন কবীর। সোমবার, তৃণমূলের সদ্য বহিষ্কৃত বিধায়ক সিউড়ির স্বপনকান্তি ঘোষের মতোই হুমায়ুনের জেহাদ, “পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পনেরো দিনের মধ্যে হাতে বহিষ্কারের কাগজ না পেলে মামলা রুজু করব।”

অনুগামীদের নিয়ে বৈঠকে হুমায়ুন।—নিজস্ব চিত্র।

অনুগামীদের নিয়ে বৈঠকে হুমায়ুন।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০০:৫৫
Share: Save:

বহিষ্কারের চার দিনের মাথায় দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিলেন হুমায়ুন কবীর।

সোমবার, তৃণমূলের সদ্য বহিষ্কৃত বিধায়ক সিউড়ির স্বপনকান্তি ঘোষের মতোই হুমায়ুনের জেহাদ, “পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পনেরো দিনের মধ্যে হাতে বহিষ্কারের কাগজ না পেলে মামলা রুজু করব।”

দিন কয়েক আগেই রেজিনগরে তৃণমূলের ৩৭টি পঞ্চায়েত প্রধান ও ৮ জন পঞ্চায়েত সমিতির প্রধানকে নিয়ে সভা করে শক্তির প্রমাণ দিয়েছিলেন তিনি। সোমবার বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে ফের বৈঠক করে স্থানীয় উন্নয়নের দাবি তুলে হুমায়ুন কবীর দাবি করলেন, দল তাড়িয়ে দিলেও এলাকায় তিনিই ‘শেষ কথা’। সেই সঙ্গে দলের বিরুদ্ধে মানহানি র হুমকি দিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, দলে যাঁর হাত ধরে এসেছিলেন সেই মুকুল রায়ের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিষয়ে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে তাঁর।

এ দিন স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কংগ্রেসের ইন্দ্রনীল প্রামাণিক। ছিলেন হুমায়ুনের পুরনো সঙ্গী তৃণমূলের তিন জন কর্মাধ্যক্ষও। প্রসঙ্গত, ৩৩ আসনের বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি এবং ৯ জন কর্মাধ্যক্ষের মধ্যে চার জন কর্মাধ্যক্ষ কংগ্রেসের এবং বাকি ৫ জন কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, খাদ্য, ত্রাণ ও বিদ্যুত্‌ কর্মাধ্যক্ষওই পাঁচ জনই তাঁর অনুগামী বলে এ দিন দাবি করেছেন হুমায়ুন।

এ দিন বৈঠকে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের শেষ কথা হুমায়ুন কবীর। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে পঞ্চায়েত সমিতি বোর্ড গঠনের পিছনে ওঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।” পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের আট জন সদস্য রয়েছে, তাঁর মধ্যে আবার পাঁচ জন কর্মাধ্যক্ষসকলেই হুমায়ুনের অনুগত বলে দাবি করেছেন ওই কংগ্রেস নেতা। জেলার সাতটি পুরসভার মধ্যে ছ’টি পুরসভায় ভোট রয়েছে এবং তৃণমূল যে বিভিন্ন গোষ্ঠী বিবাদে ছিন্ন ভিন্ন তা প্রমাণিত।

জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন এ দিন বলেন, “ওঁর বহিষ্কার দলে কোনও প্রভাব ফেলবে না। কারণ সাধারণ মানুষ সব সময়ে মূল স্রোতের সঙ্গে থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে মানুষ ভোট দেন।”

আগামী ১৬ মার্চ বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে খসড়া বাজেট রয়েছে। ওই বাজেট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা ছাড়াও ইন্দিরা আবাস যোজনা খাতে গৃহনির্মাণের জন্য বিপিএল তালিকাভুক্ত গরীব মানুষদের তালিকা তৈরির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, “মার্চের মধ্যে ইন্দিরা আবাস যোজনা খাতে উপভোক্তা পিছু ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেলডাঙা-২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের ১১০০ জনের তালিকা তৈরি করে পাঠানোর কথা। বিভিন্ন পঞ্চায়েত প্রধান ওই খাতে সঠিক উপভোক্তাদের নাম পাঠিয়েছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখতে এসেছিলাম।”

দলের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন মণ্ডল বলেন, “সিপিএমের প্রতীকে জয়ী হলেও হুমায়ুনের টানে আমি তৃণমূলে যোগ দিই। আমি হুমায়ুনের সঙ্গে আছি।” বিদ্যুত্‌ কর্মাধ্যক্ষ নাজমূল শেখ ও ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ বাগিজা বিবি বলেন, “বহিষ্কার বুঝি না। রেজিনগরে হুমায়ুন কবীর তৃণমূল দলের হয়ে যা বলবেন, তাই হবে।”

পুরসভা ভোটে হুমায়ুন যে দলের বিরুদ্ধে প্রচার করবেন, তাও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন। তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা কান্দি মহকুমা এলাকার নেতা উজ্জ্বল মণ্ডল অবশ্য মনে করছেন, “পুরভোটে হুমায়ুন কিছু করে উঠতে পারবে না। দলে তার বহিষ্কারের ঘটনায় কোনও প্রভাব পড়েনি। তৃণমূল কংগ্রেস দলটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চলে।”

তবে হুমায়ুনের দাবি, বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির ৮ জন সদস্য, বিভিন্ন পঞ্চায়েতের ৩৭ জন সদস্য ছাড়াও লালগোলা, জলঙ্গি, বড়ঞা, ডোমকল, কান্দি, ফরাক্কা, রঘুনাথগঞ্জ, নবগ্রাম, সালার, ভরতপুর, বেলডাঙা-১ ব্লকে আমার বহু কর্মী তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। দোলের পরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সভা করে তিনি অনুগামীদের সংগঠিত করার কাজ করবেন বলেও দাবি করেছেন এ দিন।

বহিষ্কারের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলেও হুমায়ুন জানান। তিনি বলেন, “৬টি পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে তো আমি প্রচার করব না। আমার ভূমিকা হবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার যোগ দেওয়া।”

এর আগে হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর বহরমপুর পুরভোটে তৃণমূল ২৮টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়ে দুটি আসনে জয়ী হয়। যেখানে ২০০৮ সালের পুরভোটে তৃণমূল মাত্র চার শতাংশ ভোট পায়, সেখানে ২০১৩ সালে ভোট পায় প্রায় ২৯ শতাংশ।

হুমায়ুনের অভিযোগ, “২০০৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহরমপুরে প্রচারে এসেও নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেননি। আর আমাকে ইন্দ্রনীল সেনের পরামর্শে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখে দিয়েছিল। এ বার দেখুন কার জোর বেশি!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

humayan kabir berhampur legal case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE