ভাঙচুরের পর। নিজস্ব চিত্র
ফের দুর্ঘটনা, নিশানায় ফের সরকারি বাস এবং ঘটনাস্থল সেই মুর্শিদাবাদ।
সোমবার সকালে কান্দির জীবন্তি শেরপুরে একটি সরকারি বাসের সঙ্গে লছিমনের ধাক্কায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে মৃত ওই যুবকের নাম রাজীব প্রধান (২৮)। পেশায় ট্রাক চালক রাজীবের বাড়ি কান্দির জিয়াদারা গ্রামে। গুরুতর জখম হয়েছেন তিন জন। তাঁদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা সরকারি বাসটি ভাঙচুর করে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলে তাদের ঘিরে ধরেও বিক্ষোভ দেখান ক্ষুব্ধ লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, গাড়ির কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। বহু বার পুলিশ-প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে বালির ঘাটের সেতু থেকে সরকারি বাস পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন ৪৪ জন যাত্রী। সেই ঘটনাতে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল সরকারি বাসের বেপরোয়া গতি ও চালকের মোবাইল ব্যবহার। সেই ক্ষত শুকোনোর আগেই সোমবার ফের সরকারি বাসের দুর্ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়েরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন জীবন্তি-শেরপুর রাজ্য সড়কের জিয়াদারা মোড় এলাকা দিয়ে যাত্রী বোঝাই একটি লছিমন যাচ্ছিল। তাকে ওভারটেক করছিল বহরমপুর থেকে জীবন্তি হয়ে শেরপুরগামী সরকারি বাসটি। ঠিক সেই সময় উল্টো দিক থেকে আসছিল পাথর বোঝাই একটি ডাম্পার। তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরকারি বাসটি সটান ধাক্কা মারে লছিমনকে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এ ক্ষেত্রেও সরকারি বাসটি দ্রুত গতিতে ছুটছিল। সেই গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এই বিপত্তি। শুক্রবার রাতে নদিয়ায় একটি টোটোয় চেপে বেশ কয়েক জন যাচ্ছিলেন পাশের গ্রামের জালসায়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে ছুটছিল টোটোটি। আলো তেমন জোরালো না হওয়ায় উল্টো দিক থেকে একটি ট্রাক ধাক্কা মারে। মারা যান সাত জন।
একের পর এক এমন ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। সোমবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে প্রশাসনিক বৈঠকে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘মোবাইল কানে নিয়ে বাস চালাতে গিয়ে মুর্শিদাবাদে যা ঘটেছে তা কোনও দুর্ঘটনা নয়, বিপর্যয়।’’ ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও পোক্ত করারও নির্দেশ দেন তিনি।
অভিযোগ, বাস্তবে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে হইচই হলেও আসলে কাজের কাজ যে কিছু হচ্ছে না, তা এই দুর্ঘটনাগুলো প্রমাণ করে দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, লছিমন সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে যাতায়াত করে। সেখানে লোকজন তো ওঠেনই, কোথাও কোথাও বিপজ্জনক ওই যানকে স্কুল ভ্যান হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। সবার চোখের সামনে এই লছিমন এ ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কোন সাহসে? কী করেই বা টোটোর মতো যান উঠে পড়ছে জাতীয় সড়কে? জেলা পুলিশের তরফে এ বিষয়ে অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।
কান্দির আইসি সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সরকারি বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই লছিমনকে ধাক্কা মেরেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy