Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
একশো দিনের দুর্নীতি

মুখ্যমন্ত্রীর বাহবা চাই, হাজির ‘ভূত’

একাধিক পঞ্চায়েতের কর্তারা জানাচ্ছেন, মাস্টার রোলে নাম থাকা মানেই যে শ্রমিক কাজে আসবে, তার মানে নেই। কিন্তু সুপারভাইজারদের বলা হয়েছিল, কাউকে অনুপস্থিত দেখানো যাবে না। সেই অনুযায়ী সুপারভাইজারেরা সকলকেই উপস্থিত দেখিয়েছেন।

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০৩
Share: Save:

একশো দিনের কাজে নদিয়া জেলা যে এগিয়ে রয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের মুখে তা প্রমাণ করতে মরিয়া বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত। একশো দিনের কাজে বেশি শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে প্রমাণ করতে কিছু পঞ্চায়েত নানা রকমের পন্থাও নিয়েছে।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, একশো দিনের কাজে কোনও স্কিম তৈরির পরে বানানো হয় মাস্টার রোল। সেই মাস্টার রোল নিয়ে সুপারভাইজারেরা চলে যান কাজের জায়গায়। সেখানে দেখে নেওয়া হয়, মাস্টার রোলে নাম থাকা সকলেই কাজে এসেছেন কি না। যাঁরা আসেন না, তাঁদের অনুপস্থিত বলে দেখানো হয়।

জেলার এক বিডিও জানাচ্ছেন, নভেম্বর থেকে মার্চ অবধি একশো দিনের কাজের চাপ থাকে। এই সময়ে বেশি করে শ্রমিকদের কাজ দিয়ে শ্রম দিবস বাড়িয়ে নিতে হয়। এটা করতে না পারলে সামগ্রিক ভাবে একশো দিনের কাজে জেলা পিছিয়ে পড়েছে। একশো দিনের বদলে লোকে হয়তো কাজ পাবে অনেক কম দিন। তাই জেলাকে সামগ্রিক ভাবে এগিয়ে দিতে গিয়েই বহু পঞ্চায়েত অসৎ উপায় অবলম্বন করেছে।

কেমন সেই উপায়?

একাধিক পঞ্চায়েতের কর্তারা জানাচ্ছেন, মাস্টার রোলে নাম থাকা মানেই যে শ্রমিক কাজে আসবে, তার মানে নেই। কিন্তু সুপারভাইজারদের বলা হয়েছিল, কাউকে অনুপস্থিত দেখানো যাবে না। সেই অনুযায়ী সুপারভাইজারেরা সকলকেই উপস্থিত দেখিয়েছেন। অর্থাৎ ‘ভূতে’ এসে কাজ করেছে। কিন্তু অনুপস্থিতদের উপস্থিত দেখালে তাঁদের পারিশ্রমিক দিতে হবে। সেই ব্যাপারেও নতুন পন্থা বার করেছে পঞ্চায়েতগুলি। একাধিক পঞ্চায়েতের মাস্টার রোলে দেখা যাচ্ছে, কোনও স্কিমে ১৫ দিন কাজ হলে অনুপস্থিতকে উপস্থিত দেখিয়ে প্রতি দিন দু’টাকা হারে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ স্কিমে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে ওই অনুপস্থিত শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে ৩০ টাকা করে। এই ভাবে জেলার অনেক পঞ্চায়েতে শ্রম দিবস বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার একটি পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মী অকপটে মাস্টার রোল দেখিয়ে বলেন, ‘‘এটা আমরা করেছি। কারণ বিডিও চাপ দিয়েছিলেন শ্রম দিবস বাড়ানোর জন্য। অনেক শ্রমিক কাজে আসেননি। তাঁদের অনুপস্থিত দেখালে তো আর শ্রম দিবস বাড়ানো যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে ব্লক অফিসের মৌন সম্মতিতেই এ সব করেছি।’’

একটি পঞ্চায়েতের মাস্টার রোলে দেখা যাচ্ছে, একটি স্কিমে ছ’দিন কাজ হয়েছে। সেখানে একাধিক শ্রমিককে পারিশ্রমিক বাবদ ১২ টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দিন হিসেবে তাঁকে দু’টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়েছে। নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। সে কারণে তাঁর প্রতিক্রিয়াও মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Administration Panchayat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE