Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তিন দিনেই উদ্ধার হয় ১৫টি চোরাই বাইক

দু’পা এগোলেই ঝাড়খণ্ড, ও পারের চোরাই মোটরবাইক তীব্র আলো জ্বেলে নিশ্চুপে সেঁদিয়ে যাচ্ছে ফরাক্কার গ্রামে। শো-রুমের দেড় লাখি বাইক বিকোচ্ছে জলের দরে। খোঁজ নিল আনন্দবাজারপুলিশের সন্দেহ বাড়ে। তা হলে তো এটাই শেষ নয়? ফরাক্কার আশপাশে এমন চোরাই মোটরবাইক আরও রয়েছে। ঠিক হল সেগুলিও উদ্ধার জরুরি।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

বিমান হাজরা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০১:০৩
Share: Save:

কথায় আছে, ‘পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা।’

কিন্তু শুধুমাত্র পুলিশের কথার ছোঁয়াতেই যে ১৫টা চোরাই মোটরবাইক রাতারাতি থানায় জমা পড়ে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি ফরাক্কা থানার পুলিশের কর্তারা। পরপর তিন দিনে ফরাক্কা থানায় জমা পড়েছিল এলাকা চষে বেড়ানো ১৫টি বাইক। যে বাইকগুলি চুরি করে এনে বিক্রি করা হয়েছিল ফরাক্কার বিভিন্ন এলাকায়।

পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। তা হলে তো এটাই শেষ নয়? ফরাক্কার আশপাশে এমন চোরাই মোটরবাইক আরও রয়েছে। ঠিক হল সেগুলিও উদ্ধার জরুরি।

দু’একদিনের মধ্যে সেগুলি জমা না পড়লে বিভিন্ন গ্রামে হানা দেবে পুলিশ। আইসি উদয় শঙ্কর এমনই সিদ্ধান্ত নিলেন। আর তখন কিন্তু কোনও মতেই ছাড় পাবে না সস্তায় কেনা বাইকের ক্রেতারাও। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও থানায় ডেকে জানিয়ে দেওয়া হল— ‘চোরাই বাইক কেনার দায়ে কেউ ধরা পড়লে কিন্তু উমেদারি করতে আসবেন না থানায়।’

কিন্তু ফরাক্কার বহু গ্রামেই তো ঘরে ঘরে বাইক। কত জনের ঘরেই বা আর হানা দেবে পুলিশ। তা ছাড়া না জেনে-শুনে তো আর যার তার বাড়িতে ঢোকাও যায় না। তাদেরও তো সম্মানবোধে লাগতে পারে। তাই সেটা এড়াতেই এক অভিনব ফন্দি আঁটেন ফরাক্কা থানার আইসি। ফরাক্কা থানায় ডাক পড়ে এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত সোর্সের।

একে একে ফরাক্কা থানায় হাজির হয় তারা। সকলকেই বলা হয়, গ্রামে যার যার বাইক আছে সকলকে খবর দাও চোরাই বাইক হলে তা যেন তারা রেখে যায় থানা চত্বরের আশপাশে। রাস্তায়, মাঠে, অলি-গলি যেখানে খুশি। এমনকি নিজের গ্রামের মাঠেও। কার বাইক, কে রেখেছে, কোথায় পেলে— কাউকে কোনও জবাবদিহি চাইবে না পুলিশ। সস্তায় কেনা চোরাই বাইক আর বাড়িতে রাখা যাবে না। যদি ভাল কথায় জমা না পড়ে, তা হলে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ধরবে পুলিশ। তখন কিন্তু আর ছাড় নেই। একেবারে চোরাই জিনিস কেনার দায়ে নির্ঘাত হাজতবাস। আর পুলিশে ছুঁলে...

সিভিক কর্মীদেরও এই একই কথা জানিয়ে দেওয়া হল। বার্তাটা রটে গেল গ্রামে গ্রামে— ‘বাইক চোরাই হলে রেখে আসুন থানার আশপাশে। কিছু বলবে না পুলিশ। আর পরে বাড়িতে হানা দিয়ে চোরাই বাইক উদ্ধার হলে জেলে পচতে হবে।’

এতে ঠিক কতটা কাজ হবে ভাবতে পারেনি পুলিশও। কিন্তু প্রথম দিন সকাল হতেই নজরে পড়ে ফরাক্কা থানার সামনে দাঁড় করানো চারটি মোটরবাইক। থানায় কাজে আসা কারও না কারও হবে ভেবে প্রথমে তেমন গা করেনি পুলিশও। কিন্তু সন্ধ্যে গড়িয়ে যাওয়ার পরেও চারটি বাইক যে পড়ে রয়েছে একই জায়গায়! এর পরেই নিশ্চিত হয় পুলিশ। বোঝা যায়, ওষুধে কাজ হচ্ছে! আসলে সেগুলি ছিল চোরাই বাইক। এ ভাবেই পরপর তিন দিনে থানার আশপাশে পুলিশ কুড়িয়ে পায় ১৫টি চোরাই বাইক!

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Bike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE