দু’টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকার কয়েনও ব্যবসায়ীদের ঘরে জমছে।
একটা সময় ‘বাটা’ (কমিশন) দিয়ে খুচরো নিতে হত। খুচরোর আকাল নিয়ে কবীর সুমন সেই সময় গানও বেঁধেছিলেন, ‘টিকিট কাটতে গিয়ে ব্যাজার মানুষ, খুচ্-খুচরো পয়সা নেই আমাদেরই জন্য...।’ এখন অবশ্য সেই ছবিটা উল্টে গিয়েছে। ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেরই একই প্রশ্ন, ‘এই বিপুল কয়েন লইয়া কী করিব?’
নিট ফল, জেলা জুড়ে ভোগান্তি চলছেই। কলতাকা কিংবা বারাসাতের দিকে ছোট এক টাকার কয়েন চললেও জেলার লোকজন তাকে ‘অচল’ করে দিয়েছেন। পেট্রল পাম্প থেকে চায়ের দোকান, বস্ত্র প্রতিষ্ঠান থেকে বাস, টোটো-অটো সর্বত্রই এক রা, ‘ছোট এক টাকার কয়েন নেব না।’
এ দিকে, দু’টাকা, পাঁচ টাকার কয়েনও ব্যবসায়ীদের ঘরে জমছে। তাঁদের অভিযোগ, ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, কয়েন নিতে হবে। প্রশাসন বলছে, কয়েন না নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রশাসন কেউই এ ব্যাপারে কোনও প্রচার ও পদক্ষেপ করছে না। ফলে বাস্তবে কেউই ছোট এক টাকার কয়েন নিতে চাইছেন না। সবথেকে বড় কথা ব্যাঙ্ক নিজেও কয়েন নিতে চাইছে না।
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলছেন, ‘‘বৈধ কয়েন কেউ নেব না বলতে পারেন না। যদি কেউ তা নিতে না চান তবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে এ বিষয়ে জনগণকে সচেতনও করা হয়।’’
মুর্শিদাবাদের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার অমিত সিংহ বলেন, ‘‘কয়েন সমস্যা সমাধানে আমরা লাগাতার সচেতন করে চলেছি। ফলে কয়েনের সমস্যা আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। এ ছাড়া ব্যাঙ্কের ম্যানেজারেরা নিয়মিত গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েন নিচ্ছেন।’’ তাঁর সংযোজন, পরিকাঠামোর সমস্যার কারণে কয়েন গোনার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। সেই সমস্যা কাটিয়েও ব্যাঙ্কগুলি কয়েন নেয়।
তবে বাস্তব বলছে অন্য কথা। মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্স অব কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘নোটবন্দির পর থেকেই কয়েন সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেই সমস্যা না মেটায় ব্যবসায়ীদের ঘরে বস্তা বস্তা কয়েন জমছে। ব্যাঙ্কও কর্মী সঙ্কটের কথা শুনিয়ে কয়েন নিচ্ছে না। সমস্যার কথা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি। এখন আমরা কোথায় যাই, বলুন তো!’’
লিড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫ পয়সার উপরে যত কয়েন রয়েছে সব বৈধ। সেই কয়েন কেউ নিতে অস্বীকার করতে পারে না। কয়েন নিতে অস্বীকার করলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগও জানানো যেতে পারে।
এমন নিয়ম থাকলেও লোকজন তা মানছেন না কেন? জেলার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক কর্তার দাবি, ‘‘কলকাতায় দিব্যি এক টাকার ছোট কয়েন চলছে। এ দিকের লোকজন নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন যে, তাঁরা ছোট এক টাকার কয়েন নেবেন না। এ সব নিয়ে একে অপরের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু এক টাকা, দু’টাকার জন্য কেউ ব্যাঙ্ক পর্যন্ত অভিযোগ নিয়ে আসেন না।’’
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ রয়েছে এক জন নিয়মিত গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাঙ্ক দিনে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকার কয়েন নেবে। অভিযোগ, সেই নির্দেশ মানা হয় না। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে কয়েন ওজন করে ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়। কিন্তু বাজারে ছাড়ার পরে সেই কয়েন ফেরত এলে ওজন যেমন কমে যায়, তেমনি একাধিক আকারের কয়েন আসে। ফলে তা আর ওজন করে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। আবার কয়েন গোনার মেশিনও নেই। ফলে কর্মী সঙ্কটের জেরে সব সময় কয়েন গোনা যায় না।
বঙ্গীয় প্রাদেশিক ব্যাঙ্ক কর্মচারী সমিতির জেলা সম্পাদক তপনকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাজার থেকে ব্যাঙ্ক যাতে কয়েন তুলতে পারে তার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর গড়ার দাবি আমরা দীর্ঘ দিন থেকে জানিয়ে আসছি। পরিকাঠামো বাড়ালে এই সমস্যা মেটানো সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy