প্রতীকী ছবি
সে কালে বাণিজ্য নগরী নবদ্বীপের ঘাটে নৌকা ভেড়ানো ‘কীর্তনমুগ্ধ’ দূরদেশী বণিক ফেরার পথে অন্য পসরার সঙ্গে বয়ে নিয়ে যেতেন চৈতন্য রেনেসাঁর বার্তা। সেই শুরু। নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে কীর্তনের সেই সুর এর পরে ভাসতে ভাসতে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। পাঁচশো বছর পেরিয়েও সেই সংকীর্তনের ধারা এখনও সমান ভাবে বহমান নবদ্বীপে।
তবে চৈতন্য-পরবর্তী নবদ্বীপের সমাজ, সংস্কৃতিকে নানা ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। চৈতন্যদেব সন্ন্যাস নিয়ে নবদ্বীপ ছেড়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় নবদ্বীপ চৈতন্যদেব বা তাঁর প্রবর্তিত বৈষ্ণবধর্মের প্রভাব শূন্য হয়ে পড়েছিল। সে কালের নৈয়ায়িক ব্রাহ্মণ থেকে রাজশক্তি— কেউই চৈতন্যদেবকে স্বীকৃতি দিতে চাননি। উল্টে শক্তিসাধনার বিপুল প্রসার হয়েছিল।
এর দীর্ঘ কাল পরে নবদ্বীপে কয়েক জন বহিরাগত সিদ্ধবৈষ্ণবের হাত ধরে কার্যত নতুন করে চৈতন্যচর্চা সূচনা হয়। এর পর অবিভক্ত বঙ্গদেশের বিভিন্ন অংশ থেকে নবদ্বীপে বিশিষ্ট বৈষ্ণবেরা আসতে শুরু করেন। তাঁরা এবং নবদ্বীপের স্থানীয় বৈষ্ণবদের চেষ্টায় নতুন ভাবে মহাপ্রভুর আদর্শে বৈষ্ণব ধর্মাচরণ। যার অন্যতম অঙ্গ হয়ে কীর্তন পাঠ, অর্থাৎ, কথকতা। পরবর্তী প্রায় দুই শতাব্দী ধরে নবদ্বীপ সেই চর্চাকে বহন করে নিয়ে চলেছে। সুসজ্জিত মঞ্চের এক দিকে বলদেব জিউর বিগ্রহ। গোলাপ আর রজনীগন্ধায় সে বিগ্রহের অর্ধেক ঢাকা পড়ে গিয়েছে। মঞ্চের সামনে নানা বয়সের প্রচুর নারী-পুরুষ। বুঁদ হয়ে শুনছেন কীর্তন। মঞ্চে কীর্তনিয়া মহাজন পদাবলির অনুপম সুরে ঘন হয়ে উঠছে মাঘের সন্ধ্যা। এক জোড়া মৃদঙ্গ নিয়ে লহরায় মঞ্চ মাতিয়ে দিচ্ছেন শ্রীখোল বাদকেরা। শ্রোতাদের ভিড় বলদেব মন্দিরের প্রশস্ত নাটমন্দিরের পরিসর উপচে ছড়িয়েছে পুর-পথে।
এ ভাবেই ৩০ জানুয়ারি থেকে নবদ্বীপের গানতলায় বলদেব জিউ মন্দিরে শুরু হয়েছে গুরুপুজোকে কেন্দ্র করে কীর্তন মহোৎসব। বিভিন্ন প্রজন্মের কীর্তনিয়া, মৃদঙ্গবাদক এবং সহযোগী মিলিয়ে প্রায় চারশো শিল্পী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিবেশন করবেন কীর্তন। পদাবলির সঙ্গে থাকছে গৌর লীলা, কৃষ্ণলীলা, রামলীলা কীর্তন। এক দিকে গাইছেন অঞ্জন উপাধ্যায়, গৌরী পণ্ডিত, শুক্লা হাজরা, দীনেন্দ্র নন্দীর মতো প্রখ্যাত কীর্তনিয়ার দল। এঁদের পাশেই গাইবেন অনুরাধা দেব গোস্বামী বা সুপ্রিয়া দাসের মতো একেবারে নবীন কীর্তনিয়ারা। (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy