হাসপাতালে হেমন্ত। —নিজস্ব চিত্র।
স্বামীকে অ্যাম্বুল্যান্সে শুইয়ে বোতল নিয়ে কল থেকে জল আনতে গিয়েছিলেন ভাগ্যবতী মণ্ডল। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা। শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল।
স্বামীকে নিয়ে ভাগ্যবতী যাবেন কলকাতায়। এক যুবক এসে বলল, সে-ই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক। ভাড়ার পঁচিশশো টাকা তাকে অগ্রিম মিটিয়ে দিতে হবে। ভাগ্যবতী আর কী করেন? দরাদরি করে একশো টাকা কমাতে রাজি করান যুবকটিকে। তার পর পুরো টাকা মিটিয়ে দেন। পরে একশো টাকা ফেরত দিচ্ছে বলে সে চলে যায়।
ভাগ্যবতীর বাড়ি কালীগঞ্জের ভরতপুরে। তাঁর স্বামী হেমন্ত মণ্ডল মূত্রনালীর সমস্যা নিয়ে বুধবার ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার রাতে চিকিৎসকেরা তাঁকে কলকাতায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেন। সে কারণেই এ দিন সকালে ভাগ্যবতী অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেছিলেন।
কিন্তু জল নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে ফিরে আসার পরে সেটির চালক চঞ্চল দাস এসে ভাগ্যবতীর কাছে ফের ভাড়ার পঁচিশশো টাকা চান। তিনি হতবাক। এই তো টাকা দিলেন! চঞ্চল জানান, তিনি টাকা দেননি। কেউ ভাগ্যবতীকে ঠকিয়ে নিয়েছে। আশপাশে খোঁজখবর শুরু হয়। কিন্তু কে এই কাজ করে থাকতে পারে তা ঠাহর করা যাচ্ছিল না। তখনই এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক এগিয়ে এসে জানান, অর্পণ সাহা নামে এক স্থানীয় যুবককে তিনি মহিলার থেকে টাকা নিতে দেখেছেন।
ফোন করা হয় অর্পণকে। কিন্ত সে আর হাসপাতাল চত্বরে আসতে রাজি হচ্ছিল না। পরে বাড়ি থেকে ডেকে আনা হলে দেখেই চিনতে পারেন ভাগ্যবতী। কিন্তু সে টাকা নেওয়ার অস্বীকার করত থাকে। শেষে চাপের মুখে অর্পণ স্বীকার করে, সে টাকা নিয়েছিল, তবে তা নেহাতই ভাঙিয়ে দেওয়ার জন্য। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। কোতোয়ালি থানার পুলিশ এলে ভাগ্যবতী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অর্পণকে নিয়ে যায়।ভাগ্যবতী বলেন, “আমার কাছে মাত্র তিন হাজার টাকা ছিল। ওই ছেলেটা তার থেকে ২৫০০ টাকা নিয়ে চলে গেল। তখন তো আমার পাগলের মত অবস্থা! বুঝতেই পারছি না, কী করে অসুস্থ মানুষটাকে কলকাতায় নিয়ে যাব।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অর্পণকে মাস কয়েক আগেই আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার করেছিল তাহেরপুর থানা। বর্তমানে সে জেলা সদর হাসপাতাল এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স চালায়। স্বামীকে নিয়ে কলকাতা যাওয়ার তোড়জোড় করা ভাগ্যবতী যে একা, তা বুঝতে পেরেই সে প্রতারণার ছক কষেছিল। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy