Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Abhinandan Yatra

শহরে সমর্থক কম বিজেপির, বলছে তৃণমূল

তৃণমূল দাবি করছে, রানাঘাট শহরের লোক মিছিল বা সভায় ছিল না বললেই চলে। গ্রাম থেকে লোক এনে ভিড় জমানো হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২১
Share: Save:

কেউ বলছেন, হাজার দশেক। কেউ বলছেন, আরও বেশি হবে।

রবিবারের শীতদুপুরে রানাঘাটে বিজেপির ‘অভিনন্দন যাত্রা’ ও সভায় ভিড় যে হয়েছিল, তাতে সন্দেহ নেই। যে ভিড় দেখে উৎসাহিত হয়ে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ক্ষমতায় এলে কাউকে-কাউকে গুলি করে মারার হুমকিও দিয়ে ফেলেছেন।

কিন্তু তৃণমূল দাবি করছে, রানাঘাট শহরের লোক মিছিল বা সভায় ছিল না বললেই চলে। গ্রাম থেকে লোক এনে ভিড় জমানো হয়েছিল। এমনকি নিচুতলার বিজেপি কর্মীরাও স্বীকার করছেন, রানাঘাট উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ বিধানসভা এলাকা থেকে বেশি লোক এসেছিল, যাদের একটা বড় অংশই মতুয়া। খোদ রানাঘাট শহরের লোক কমই ছিল, যা কিনা পুরভোটের আগে বিজেপির জন্য আদৌ সুখবর নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের এক বিজেপি কর্মী বলেন, “ভালই ভিড় হয়েছিল। কিন্তু রানাঘাট শহরের লোককে সে ভাবে পা মেলাতে দেখা যায়নি। সামনে পুরভোট। এখানকার লোক বেশি হলে ভাল হত।’’ কাছেই দাঁড়ানো এক তৃণমূল কর্মীর মতে, ‘‘রানাঘাট ছোট শহর। যারা রাজনীতি করে, অনেকেই একে অপরকে চেনে। কে কোন দলের সঙ্গে যুক্ত, তা-ও সকলের কাছে পরিষ্কার। তার বাইরে কেউ যেচে প্রকাশ্যে আসতে চায় না। তার উপর নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশ জোড়া আন্দোলনও প্রভাব ফেলছে।’’

গত লোকসভা নির্বাচনের হিসেব বলছে, রানাঘাট শহরে ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি বাদে বাকি সব ক’টিতেই বিজেপি এগিয়ে ছিল। কিন্তু তার পরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে দেশ জুড়ে ওঠা ঢেউ অনেক হিসাব পাল্টে দিয়ে থাকতে পারে। রানাঘাটেও আইনের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মিছিল-সভা হয়ে গিয়েছে। প্রচারের ধারে-ভারে এখনও তৃণমূলই এগিয়ে। বিজেপি বরং নাগরিকদের সে ভাবে বুঝিয়ে উঠতে পারেনি, হিন্দু-মসলিমে ভাগ করা এই আইন কেন সমর্থনযোগ্য।

আবার এ-ও ঠিক যে রানাঘাটে পুরভোট শুধু এই বিষয়কে ঘিরে হবে না। যে কোনও পুরভোটের মতোই স্থানীয় অভাব-অভিযোগ দাবি-দাওয়া তাতে প্রভাবে ফেলবে। ফলে কোন হিসেব কী কাজ করবে তা অনিশ্চিত। ফলে রাস্তায় কাদের সঙ্গে কত লোক দেখা যাচ্ছে, সব পক্ষকেই সেই হিসেব কষতে হচ্ছে।

রানাঘাটের পুরপ্রধান, তৃণমূলের পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করছেন, “বিজেপির পদযাত্রায় লোক লোক হয়তো কিছু হয়েছে। কিন্তু ওতে ভোট হবে না। বরং দিলীপ ঘোষ যে ভাষায় বক্তৃতা করেছেন, আমাদেরই মঙ্গল হয়েছে। পুর নির্বাচনের আগে এ সবই হবে আমাদের তুরূপের তাস।” এক কদম এগিয়ে রানাঘাট শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি পিন্টু সরকার দাবি করেন, “বিজেপিকে উপেক্ষা করে মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে, এই শহরে তাদের কোনও ঠাঁই নেই।”

বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার শতকরা ৭৫ ভাগ এলাকা থেকে লোক এসেছিল। যাঁরা বলছেন, রানাঘাট শহরের লোক সে ভাবে ছিল না, তাঁরা ঠিক বলছেন না। হয়তো ভিড়ের কারণে তাঁরা সেটা বুঝতে পারেননি।”

বিজেপির পদযাত্রায় যে দুই জায়গা থেকে সবচেয়ে বেশি লোক এসেছে, তার একটি তৃণমূলের দখলে, অন্যটি জেলায় সিপিএমের হাতে থাকা এক মাত্র বিধানসভা কেন্দ্র। রানাঘাট উত্তর-পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক সমীরকুমার পোদ্দার অবশ্য তাঁর এলাকা থেকে বেশি লোক আসার কথা মানতেই রাজি নন। তিনি বলেন, “কে কী বলছেন, সেটা আমি বলতে পারব না। এখান থেকে বিজেপির পদযাত্রায় সে ভাবে লোক যায়নি। লোকসভা নির্বাচনের পরে এখানে ওদের যে প্রভাব ছিল, তা অনেকটাই স্তিমিত।” রানাঘাট দক্ষিণের সিপিএম বিধায়ক রমা বিশ্বাস আবার বলেন, “এখান থেকে বিজেপির সভায় বেশি লোক যাওয়ার কথা জানা নেই। বিজেপি-আরএসএসের প্রধান শত্রু সিপিএম। তাই ওরা অপপ্রচার করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhinandan Yatra BJP TMC Ranaghat Dilip Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE