দুর্ঘটনার পরে। কৃষ্ণনগরে রাস্তা অবরোধ। সোমবার কৃষ্ণনগর শহরে। নিজস্ব চিত্র
ঠাকুর দেখে ফেরার পথে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেলেন এক মহিলা। পুলিশ জানায়, ওই মহিলার নাম গায়ত্রী চক্রবর্তী (৪৭)। তাঁর বাড়ি কৃষ্ণনগরের রোড স্টেশন এলাকায়। সোমবার ভোরে কৃষ্ণনগর সদর মোড়ে এই ঘটনার পরে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে গায়ত্রীর ছেলে অর্ণব।
গায়ত্রীর স্বামী, পেশায় ডাক কর্মী আশিস চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মোটরবাইক আস্তেই চালাচ্ছিলাম। আচমকা সামনে এক মদ্যপ যুবক চলে আসে। সে যে কোন দিকে যাবে, বুঝতেই পারিনি। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ধাক্কা লাগলে ডান দিকে পড়ে যাই। তখনই স্ত্রীর মাথার উপর দিয়ে চলে যায় পিছন দিক থেকে আসা লরির চাকা।’’
দশমীর ভোরে রাস্তায় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল ভালই। এমন দৃশ্য দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরাও। রাস্তা আটকে শুরু হয় বিক্ষোভ। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ আসে। কিন্তু উৎসবের দিন ভোরে শহরের ভিতরে লরি ঢুকতে দেওয়া হয়েছে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুলিশ কর্মীদেরকেও ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। অভিযোগ, ঘটনার সময় ব্যস্ত সদর মোড়ে যানজট নিয়ন্ত্রণে কোনও পুলিশ ছিল না। অভিযোগ, পরে আরও পুলিশ এসে মৃদু লাঠি চালিয়ে অবরোধ তুলে দেয়।
প্রতি বছর বুড়িমাকে দর্শন করতে আসে চক্রবর্তী পরিবার। ভোরের দিকে বুড়িমার মণ্ডপে ভিড় সাধারণত কম থাকে। সেই কারণে এ দিন ভোরেও বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন চক্রবর্তী দম্পতি, ছেলে অর্ণব ও তাঁদের এক প্রতিবেশী। বুড়িমাকে দর্শন করে ফিরছিলেন তাঁরা। আশিসের বাইকে ছিলেন গায়ত্রী। অর্ণব ছিল পিছনে, প্রতিবেশীর বাইকে। সদর মোড়ের কাছে আচমকা আশিসের বাইকের সামনে টলমল পায়ে চলে আসে এক মদ্যপ যুবক। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগে তার সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায় আশিসের বাইকের। রাস্তাতেই পড়ে যান ওই দম্পতি। পিছনেই ছিল একটি লরি। মুহূর্তের মধ্যে লরির চাকা উঠে যায় গায়ত্রীর মাথার উপরে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর এক অন্যতম আকর্ষণ বুড়িমা। চাষা পাড়া বারোয়ারির প্রতিমাকে এ নামে সকলে চেনেন। সেই প্রতিমা দর্শন করতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন কৃষ্ণনগরে। শহরের বাসিন্দারাও যে ভাবেই হোক, একটা সময় বের করে বুড়িমার সামনে দাঁড়ান। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতেও ঠাকুর দেখতে যায় চক্রবর্তী পরিবার। ১২টা নাগাদ বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া করে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিয়ে ফের ভোরে স্বামী ও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গায়ত্রী এসেছিলেন বুড়িমাকে দর্শন করতে।
জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়ার দাবি, মৃত ওই মহিলার স্বামী বাইক নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রাস্তার উপরে পড়ে যান। তখন লরিটা পিছন থেকে এসে মহিলাকে চাপা দেন। রাত ৩টের পরে শহরে ‘নো-এন্ট্রি’ উঠে যাওয়ায় শহরের ভিতরে ঢুকতে পেরেছিল লরিটি। তিনি বলেছেন, ‘‘ঘটনাস্থলে পুলিশকর্মী না থাকার অভিযোগ ঠিক নয়। ঘটনার পরেই ওই লরিটি আটক করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চালককে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy