Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

লুট হচ্ছে বাঁধের মাটি, টনক নড়ে না প্রশাসনের

কিছু দিন আগে ফরাক্কার বেওয়া-২ প়ঞ্চায়েতের গুমানী নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। একই অভিযোগ উঠেছিল ফরাক্কার বাহাদুরপুর পঞ্চায়েত এলাকাতেও। বাহাদুরপুর পঞ্চায়েত প্রধান চিঠি পাঠিয়ে প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করার দাবি জানান

এ ভাবেই প্রকাশ্যে চলছে মাটি কাটা। ফরাক্কায়। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই প্রকাশ্যে চলছে মাটি কাটা। ফরাক্কায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৭
Share: Save:

বিপন্ন হয়ে পড়েছে ফরাক্কার দ্বীপচর গ্রাম! প্রতি দিন লুট হয়ে যাচ্ছে দ্বীপচরের বাঁধের মাটি। মাটি মাফিয়াদের দাপটে বিপন্ন হয়ে পড়েছে দ্বীপচর গ্রাম। সোমবার সকালে অবশ্য মরিয়া হয়ে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করায় পিছু হটে মাটি মাফিয়ারা। পাল্টা বোমা মারার হুমকি দেয় তারা।

কিছু দিন আগে ফরাক্কার বেওয়া-২ প়ঞ্চায়েতের গুমানী নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। একই অভিযোগ উঠেছিল ফরাক্কার বাহাদুরপুর পঞ্চায়েত এলাকাতেও। বাহাদুরপুর পঞ্চায়েত প্রধান চিঠি পাঠিয়ে প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করার দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটে যায়।

এখন ফের দুষ্কৃতীদের হাত থেকে গ্রাম ও চাষের জমি বাঁচাতে গ্রামবাসীরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। কিন্তু প্রশাসন কোনও কড়া পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। দিন-দুপুরে অবাধে চলছে মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। মাটি মাফিয়াদের পিছনে শাসক দলের কোনও কোনও নেতার সরাসরি মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন দ্বীপচর গ্রামেরই খোদ তৃণমূলের বুথ সভাপতি তিলক মন্ডল। তৃণমূলের জঙ্গিপুর মহকুমা সভাপতি বিকাশ মন্ডল বলছেন, “দলের কোনও নেতা মাটি-মাফিয়াদের সমর্থন করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।” তবে রানিনগর পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের নুরিয়া বিবি বলছেন, “বিডিও, এসডিও ছাড়াও ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে গ্রামবাসীরা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। আমি নিজেও বার বার করে প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু মাটি কাটা বন্ধ করা যায়নি।’’

ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া প্রায় ৭০ বিঘে খাসজমি রয়েছে দ্বীপচরে। ১৯৭৫ সালে ফরাক্কা ব্যারাজ নির্মাণের পরে দ্বীপচর গ্রামে ভাগীরথীর জল যাতে ঢুকতে না পারে, সে জন্য ওই খাস জমির ২৫ বিঘে এলাকা জুড়ে ৭০০ মিটারের দুটি মাটির বাঁধ দেয় প্রশাসন। মাঝ দিয়ে গিয়েছে ক্যানাল, সেখান থেকেই চাষিরা সেচের জল পান। অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে মাটি-মাফিয়ারা লাগাতার মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে প্রায় ৭০ মিটার চওড়া সেই বাঁধের একটি নির্মূল করে দিয়েছে, অন্য বাঁধের অবস্থা কহতব্য নয়! প্রায় অর্ধেক কেটে ফেলেছে।

রঘুনাথগঞ্জ-১ ব্লকের রানিনগর পঞ্চায়েতের অধীনে হলেও দ্বীপচর গ্রামের অবস্থান ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে। ঠিক তার পাশেই রয়েছে রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লকের তেঘরি পঞ্চায়েত এলাকা। অভিযোগ, প্রতিদিন ডজন দুয়েক ট্রাক্টরে করে সেই বাঁধের কাটা মাটি মাফিয়ারা বিক্রি করছে রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লকের ইটভাটাগুলিতে। ফলে চাষের জমি নষ্ট তো হচ্ছেই, কাটা পড়ছে বাঁধও। এ দিকে মাটি মাফিয়াদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় সরব শাসক দলের নেতারা।

গ্রামের কৃষক দুর্গেশ মন্ডল বলছেন, “নদীর পাড়ে বাঁধ গড়ার ফলে ২০০০ সালের ভয়াবহ বন্যাতেও আশপাশের সব এলাকা ডুবলেও ডোবেনি দ্বীপচর গ্রাম। মাটি মাফিয়ারা সেই বাঁধ কেটে মাটি কেটে নেওয়ায় আশঙ্কায় রয়েছেন গ্রামের মানুষ।” অভিযোগ পেয়েই গত ২৩ নভেম্বর হানা দিয়ে মাটি বোঝাই ২০টি ট্রাক্টর ধরে মোটা টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের নোটিশও পাঠানো হয়েছে। এর সেখানে মাটি কাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরের রঘুনাথগঞ্জ-১ ও ২ ব্লক আধিকারিক রণেন্দ্রনাথ মন্ডল ও বাপ্পা মন্ডল। রানিনগর পঞ্চায়েত প্রধান অবশ্য পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে পুলিশের সাহায্য নিচ্ছে না কেন প্রশাসন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Administration Soil Stealing Farakka Dam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE