—প্রতীকী চিত্র।
সিআইডি এল, সিআইডি গেল। ধরাও পড়ল কিছু ভেজাল ঘি ব্যবসায়ী। কিন্তু, সব কিছুর পরেও যে প্রশ্নটা রয়ে গেল, ভেজাল ঘিয়ের পাট কী চুকল? না, তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না পুলিশও। কারণ, ফুলিয়া বলছে ঘিয়ের ভেজাল কারবার ফের শুরু হয়ে গিয়েছে। আড়ালে আবডালে চলা সেই কারবারের সুলুকসন্ধান পুলিশ এখনও পায়নি।
তবে ভেজাল কারবারি ধরপাকড় তা নিয়ে শোরগোল শুরু হওয়ায় আখেরে ক্ষতি হয়েছে ফুলিয়ার ঘি ব্যবসার। ঘি প্রস্তুতকারকদের বক্তব্য, ‘‘সবাই তো ভেজালের কারবার করেন না। কিন্তু, ফুলিয়ার ঘি নিয়ে যা হল, তার পরে সৎ ভাবে ব্যবসা করাটাই দুষ্কর হয়ে উঠছে।’’ তাঁরা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় মাস খানেকের জন্য পুরো ব্যবসাটাই থমকে গিয়েছিল। এখনও রয়েছে তার প্রভাব। ফের নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে ফুলিয়ার ঘি।
ফুলিয়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভেজাল ঘিয়ের ব্যবসায় কয়েক জনকে দ্রুত ফুলে ফেঁপে উঠতে দেখে একে একে অনেকেই সেই কারবার শুরু করেন। ক্রমে কারবার বুইচার গন্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বেলেমাঠ, ব্যাঙগর্ত, সাবেহডাঙা, তেজপুর, মাঠপাড়া, ফুলিয়া পাড়া এলাকায়। সেই সঙ্গে পলাশী, নাকাশি পাড়া, চাকদহ থেকে রেল পথে আসতে শুরু করে অতিরিক্ত ক্রিম। ক্রমশ বাড়তে থাকে ভেজাল ঘিয়ের কারখানা। আর সেই ঘি লরি বোঝাই হয়ে পৌঁছে যেতে লাগল কলকাতায়।
নামি সংস্থার পাশাপাশি ফুলিয়ায় ভেজাল ঘি তৈরির পিছনে আরও একটা কারণকে চিহ্নিত করছেন অনেকেই। তা হল পুজোর জন্য কম দামের ঘিয়ের চাহিদা। ওই ঘিয়ের গুনগত মান নিয়ে মানুষ তেমন ভাবে মাথা ঘামান না। বরং কম দামে বেশি পরিমান ঘিয়ের খোঁজই বেশি। আর সেটা করতে গিয়েই পশুর চর্বি, বনস্পতি, রিফাইন তেলের সঙ্গে ক্রিম মিশিয়ে তৈরি হতে থাকে ভেজাল ঘি। আর রঙ আনার জন্য ব্যবহার করা শুরু হয় এক বিশেষ ধরণের ফল। স্থানীয় ভাষায় তার নাম ‘নটকা’ ফল। স্থানীয়দের কথায়, ‘‘পুলিশ বা সিআইডি কেবল মাত্র হিমশৈলের চুড়া স্পর্শ করতে পেরছে মাত্র। কারণ, এই ব্যবসার শিকড় অনেক গভীরে। পরিধি অনেক বড়। সবচাইতে বড় কথা, এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন অনেক প্রভাবশালী মানুষও।’’
তবে পুলিশ ও সিআইডি হানার পরে প্রবল চাপের মধ্যে পড়ে যান ফুলিয়ার সব ঘি ব্যবসায়ী। প্রায় মাস খানেক ঘিয়ের ব্যবসা থমকে যায়। ফুলিয়ার এক ঘি ব্যবসায়ীর কথায়, “আমরা ভেজাল ঘিয়ের ব্যবসা করিনি কোনও দিনই। কিন্তু এই ঘটনার পর আমাদেরও ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড় হয়েছিল।” তাঁরা ঠিকঠাক ব্যবসা করলে, তাঁদের ব্যবসা থমকে যাবে কেন? তিনি বলেন, “যে ক্রিম বাইরে থেকে আসছে, তাতে ভেজাল আছে কিনা আমরা সেই বিষয়ে নিশ্চিত নই। ফলে ভেজার ক্রিম কিনে ফের আমাদেরও হাতে না হাতকড়া পড়ে।” আর সেই জন্য অনেক ব্যবসায়ী ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করে ক্রিমের ভেজাল মাপার যন্ত্র কিনে নিয়েছেন। এই ধড়পাকড়ের পরে ভেজাল ঘি তৈরির ব্যবসা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও আবার নতুন করে তা শুরু হয়েছে। যদিও তা অত্যন্ত গোপনে।
মুর্শিদাবাদের ভাগীরথী ডেয়ারির অভিযোগ, তাদের ব্র্যান্ড নকল করে বাজারে ভেজাল ঘি ছড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে অভিযোগও জমা পড়েছে। জেলার বেলডাঙা, নওদা-সহ বিভিন্ন জায়গায় ভেজাল ঘি তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। কিন্তু পুলিস কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy