Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জীবিত ছিলেন, মরেই প্রমাণ ষষ্ঠীর

সুতীর বংশবাটি গ্রামের রাজবংশী পাড়ার বাসিন্দা ষষ্টী মাঝি শনিবার পর্যন্ত দিব্যিই বেঁচেবর্তে ছিলেন। সে তো ছিলেন পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। কিন্তু সরকারি খাতায় যে ২০১৪ সাল থেকেই তিনি মৃত।

সুতির ব্লক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন ষষ্ঠী। ফাইল চিত্র

সুতির ব্লক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন ষষ্ঠী। ফাইল চিত্র

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪০
Share: Save:

রবি ঠাকুরের ‘জীবিত ও মৃত’ গল্পের নায়িকা কাদম্বিনীকে মরে প্রমাণ করতে হয়েছিল, এতদিন সে জীবিত ছিল।

সুতীর বংশবাটি গ্রামের রাজবংশী পাড়ার বাসিন্দা ষষ্টী মাঝি শনিবার পর্যন্ত দিব্যিই বেঁচেবর্তে ছিলেন। সে তো ছিলেন পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। কিন্তু সরকারি খাতায় যে ২০১৪ সাল থেকেই তিনি মৃত। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁর বার্ধক্য ভাতাও। সশরীরে বিডিও-র অফিসে গিয়ে তিনি জানান দিয়ে এসেছেন, তিনি তো বেঁচেই আছেন!

সরকারি আধিকারিকরাও জানিয়েছিলেন, তাঁর বার্ধক্য ভাতা চালু হবে অচিরেই। তার পরে পার হয়ে গিয়েছে তিন-তিন বসন্ত। নাহ্, চালু হয়নি তাঁর বার্ধক্য ভাতা। এক কলমের আঁচরে সরকারি খাতায় তাঁর মৃত্যু হলেও, আর এক আঁচরে আর প্রাণ ফিরে পাননি তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় জঙ্গিপুর হাসপাতালে মৃত্যু হল তাঁর।

তাঁর ছেলে বাসুদেব মাঝি বলছেন, ‘‘সরকার তো আগেই বাবাকে মেরে ফেলেছিল। কী আশ্চর্য, এখন আবার সেই সরকারেরই হাসপাতাল বাবার ডেথ সার্টিফিকেট দিল। যে পঞ্চায়েত থেকে বাবাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই পঞ্চায়েতে বাবার মৃত্যুর তথ্য দাখিল করতে হবে!

সুতির বংশবাটি গ্রামের রাজবংশি পাড়ার বাসিন্দা ষষ্ঠী মাঝি ও তার স্ত্রী বেলা মাঝি। বিপিএল ভুক্ত পরিবার। আধার কার্ড থেকে খাদ্য সুরক্ষার ডিজিট্যাল রেশন কার্ড সবই ছিল তাঁদের। দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্য ভাতার টাকা পেতেন দুজনেই। গ্রামেরই একটি ব্যাঙ্কে তা জমা পড়ত।

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যান তার স্ত্রী বেলা। তারপরে স্ত্রীর নামের সঙ্গে ভাতার তালিকা থেকে মৃত দেখিয়ে কাটা পড়ে স্বামী ষষ্ঠী মাঝির নামও।

বছর সত্তরের ষষ্টিবাবুর ওই ভাতার টাকাটুকুই ছিল সম্বল। ২ টাকা কিলোর চাল, গম পেতেন রেশনে। পাঁচ-ছ’ মাস অন্তর ভাতার টাকা আসত গ্রামের ব্যাঙ্কে। স্ত্রীর মৃত্যু পরে ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে ব্লক অফিস, সবাই জানিয়ে দেয় ‘ষষ্ঠী মাঝি মৃত’।

গত তিন বছরে ষষ্টিবাবু সশরীরে বংশবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিকবার হাজির হয়ে প্রমাণ দিয়ে এসেছেন তিনি মরেননি। কয়েক মাইল পথ ঠেঙিয়ে ব্লক অফিসে আবেদন করেছেন নিজের হাতের টিপ ছাপ দিয়ে। ভোটের ছবি নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছেন “এই দেখুন বাবু আমি ষষ্ঠী মাঝি, বাবা খেতু মাঝি, নিবাস বংশবাটি, থানা সুতি, জেলা মুর্শিদাবাদ। এই তো আমি দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছি।”

আনন্দবাজারে “মৃত” ষষ্ঠীর খবর দেখে সাড়া পড়ে গিয়েছিল ব্লক অফিসের কর্তাদের। তড়িঘড়ি ব্লক অফিসে সশরীরে হাজির হতে বলা হয় ষষ্ঠীবাবুকে। বছর সত্তরের অশক্ত শরীরে লাঠিতে ভর দিয়ে ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই হাজির হন আহিরণে সুতি ১ ব্লক অফিসে। অফিস ছাড়ার আগে ব্লকের আধিকারিকদের বলে এসেছিলেন, ‘‘দেখবেন বাবু, চিরতরে চোখ বোজার আগে যেন আমাকে বাঁচানো হয়।’’

রবিবার সন্ধ্যায় বিডিও দীপঙ্কর রায় বলেন, “আগে পঞ্চায়েত প্রধানের শংসাপত্রে জীবন্মৃত করার ক্ষমতা ছিল ব্লক অফিসের। এখন সে নিয়ম আর নেই। সবটাই হয় কেন্দ্রীয় স্তরে। ব্লক অফিস থেকে ষষ্ঠীবাবুকে জীবিত করার রিপোর্ট সেখানে বহু আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি। কেন হল না তা বলতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE