Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বলেছি তো, কলকাতায় দেখান

কাঁচির খোঁচায় বাদ পিত্তনালি

পিত্তথলিতে পাথর হয়েছিল। কিন্তু, পরিবারের দাবি, অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে আস্ত পিত্তনালিটাই কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে, পাঁচ মাস ধরে বিছানায় ওই তরুণী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

পিত্তথলিতে পাথর হয়েছিল। কিন্তু, পরিবারের দাবি, অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে আস্ত পিত্তনালিটাই কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে, পাঁচ মাস ধরে বিছানায় ওই তরুণী।

কান্দির হিজল পঞ্চায়েতের নতুন গ্রামের সাতাশ বছরের সায়রাবানুর প্রশ্ন, ‘‘এর দায় কে নেবে বলুন!’’

নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা পরিবারের। স্বামী-স্ত্রী আর এক ছেলের সংসারে রোজগেরে বলতে স্বামী সারেজুল হক। তিনি জানান, গত আক্টোবরে পেটের ব্যাথায় সোজা হয়ে বসতে পারছিল সায়রা। কান্দি ও বহরমপুর হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে জানতে পারেন পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে চিকিৎসা হবে কী করে?

সরকারি হাসপাতালে বেড না মেলায় লালবাগের এক বেসরকারি হাসপাতালে রাষ্ট্রীয় বিমা যোজনার টাকায় পিত্তথলি অস্ত্রোপচারে গিয়েছিলেন ওই দম্পতি। তার পর থেকেই এই হাল।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসক অর্ণব মিত্র অস্ত্রোপচারের পর সপ্তাহ খানেক রেখেও দিয়েছিলেন হাসপাতালে। বাড়ি ফিরে ফের অসুস্থ হয়ে পরায় এ বার তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির লোক। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, ফের অস্ত্রপচার ছাড়া গতি নেই। কিন্তু খরচ জোগাবে কে?

দশ কাঠা জমি মাত্র ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করেছিলেন সারেজুল।

তিনি বলেন, “অর্ণববাবুর কাছে ফের দরবার করতেই উনি এ বার কলকাতার হাসপাতাল দেখিয়ে দিলেন। কিন্তু বাসে বা ট্রেনে স্ত্রীকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা যাতায়াতের ভাড়াটা চেয়েছিলাম, মেলেনি।’’

ওই চিকিৎসক অবশ্য সে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন, দাবি, ‘নিতান্তই মিথ্যা অভিযোগ’। তিনি বলেন, ‘‘পিত্তথলিতে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে পিত্তনালির সামান্য ক্ষতি হয়েছে ঠিকই। ওই ধরণের ঘটনা শতকরা এক জনের ক্ষেত্রেও হয় না। কিন্তু সায়রাবানুর ক্ষেত্রে হয়েছে।’’

তা হলে মানছেন পিত্তনালির সামান্য হলেও ক্ষতি হয়েছে?

এ বার পিছু হটতে থাকেন অর্ণববাবু। তিনি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে আরও একটি অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন যে ছিল তা মানছি। তবে রোগীর পরিবারের লোকজনের আমার উপরে তেমন ভরসা করতে চাননি। আমি তখন, কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে আমার পরিচিত এক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তাঁর কাছেও ওঁদের যেতে বলেছিলাম।’’

কিন্তু এ ভাবে দায় এড়ানো যে যায় না, বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওঠা একের পর এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও স্পষ্ট করে দিয়েছেন এমন অভিযোগ আর এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।

লড়াইটা অবশ্য হারতে চান না গ্রামীণ সারেজুল। সম্প্রতি, তাই ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছেন তিনি। তবে, সারেজুল জানেন, ‘‘মামলায় ছুঁলে আঠারো ঘা বাবু!’’ সে ঘা শুকিয়ে, রায় বেরোতে বছর ঘুরে গেলে?

আর এক ফালি বিছানায় শুয়ে সায়রা বিড় বিড় করছেন, ‘‘আমি বাঁচব তো বাবু!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Negligence Private Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE