পায়েল কোনাই। নিজস্ব চিত্র
তাঁদের সম্পর্কে মত ছিল না পরিবারের। বাধাও এসেছিল বিস্তর। কিন্তু গোকর্ণের পায়েল কোনাই (১৮) কারও কথা শোনেননি। বাড়ির সকলের মুখের উপরেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘যাকে ভালবাসি, তাকেই বিয়ে করব।’’ কথা রেখেছিলেন পায়েল। ভালবাসার মানুষটিকে বিশ্বাস করেই তিনি
ঘর ছেড়েছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে সেই পায়েলেরই নিথর দেহ মিলল তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। পায়েলের বাবা ত্রিদিব মিস্ত্রি কান্দি থানায় পায়েলের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছেন। বুধবার পায়েলের স্বামী তপন কোনাই, শ্বশুর লোহারাম কোনাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পায়েলের বাবার অভিযোগ, ‘‘পণের জন্য ওরা প্রায়ই মেয়েটাকে অত্যাচার করত। নাতিটা প্রতিবন্ধী হওয়ায় মেয়ের উপরে অত্যাচার আরও বাড়ে। মঙ্গলবার রাতে জামাই ও তার বাড়ির লোকজন মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করে
ঝুলিয়ে দিয়েছে।’’
পুলিশও জানিয়েছে, পণ নিয়ে একটা সমস্যা ছিলই। সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় ওই তরুণীকেই দুষতেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে বাড়ির অমতেই বিয়ে করেন পায়েল। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় অশান্তি। অভিযোগ, পণের জন্য প্রায়ই পায়েলকে চাপ দেওয়া হত। তাঁর স্বামী তপন প্রতিদিন মদ খেয়ে বাড়ি ফিরত। পায়েল কিছু বললেই মারধর করত। বিয়ের বছর দেড়েক পরে ওই তরুণী পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু জন্ম থেকেই শিশুটি প্রতিবন্ধী। সেই কারণেই পায়েলকেই দোষারোপ করা হত।
অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতেও মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে পায়েলকে মারধর করে। তার পরে শ্বাসরোধ করে খুন করে চম্পট দেয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দারা গিয়ে ওই তরুণীকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। তাঁকে উদ্ধার করে গোকর্ণ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন। খবর পেয়ে কান্দির গোকর্ণ ফাঁড়ির পুলিশ ওই রাতের পায়েলের স্বামী ও শ্বশুরকে আটক করে। বুধবার পায়েলের বাবার লিখিত অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
ত্রিদিববাবু বলেন, “আমার তিন মেয়ের মধ্যে পায়েল বড়। তখন ও আমাদের কারও কথা শুনল না। বাড়ি থেকে চলে গিয়ে তপনকেই বিয়ে করল। তবে বিয়ের পরে মেয়ের উপর আর রাগ করে থাকতে পারিনি। ওদের সম্পর্কটা মেনেই নিয়েছিলাম। অথচ তপন ও তার পরিবার ওর সঙ্গে কী করল, বলুন তো! আমার আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাই ওদের চাহিদা মতো পণও দিতে পারিনি। কিন্তু সেই কারণে মেয়েটাকে যে ওরা মেরেই ফেলবে, স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি ওদের কঠোর শাস্তি চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy