Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রেফার হচ্ছে? চিন্তা কী, সব রেডিই আছে

ভীষণ বিপদে নিতান্ত দায়ে পড়েই লোকে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকে। দরদাম করার সুযোগ থাকে না, চালক ভুল বুঝিয়ে বিপথে চালিত করছেন কি না তা বোঝার মতো মনের অবস্থাও থাকে না অনেকের। তার ফায়দা নেয় কিছু অসাধু চালক। নিয়ন্ত্রণ করবে কি? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। ভীষণ বিপদে নিতান্ত দায়ে পড়েই লোকে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকে। দরদাম করার সুযোগ থাকে না, চালক ভুল বুঝিয়ে বিপথে চালিত করছেন কি না তা বোঝার মতো মনের অবস্থাও থাকে না অনেকের। তার ফায়দা নেয় কিছু অসাধু চালক। নিয়ন্ত্রণ করবে কি? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।

সার দিয়ে দাঁড়িয়ে। জেএনএম হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

সার দিয়ে দাঁড়িয়ে। জেএনএম হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল ও সুস্মিত হালদার
কল্যাণী ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে ঢুকছিলেন পায়রাডাঙার রতন সরকার। হাতে ইঞ্জেকশন আর ওষুধের প্যাকেট। জরুরি বিভাগের মুখে অপরিচিত এক যুবক জানাল, তাঁর স্ত্রীকে কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। রতন অবাক। এই তো নার্স তাঁকে ওষুধ আনতে বললেন! যুবকটি বলল, ‘‘ভিতরে যান, জেনে যাবেন।’’

কিন্তু তিনি জানার আগেই যুবকটি তা জেনে ফেলল কী করে? অতশত ভাবার সময় ছিল না। দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করা, দোকানে ওষুধ ফেরত দেওয়া— মেলা কাজ। কিন্তু বাইরে বেরোতেই সেই যুবক এগিয়ে এল— ‘‘চটপট রেডি হয়ে নিন। বৌদিকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দেব।’’ ওষুধ ফেরত নাকি সে-ই দিয়ে দেবে।

অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া কত? ‘মাত্র সাড়ে তিন হাজার। বিশ্বাস না হয়, বাইরে রেট যাচাই করতে পারেন’’— অম্লান বদনে বলল যূবকটি। ততক্ষণে তাঁর স্ত্রীকে স্ট্রেচারে বের করে এনেছে দু’জন। রতন পরে শোনেন, কল্যাণী থেকে কলকাতার অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া বড় জোর আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু পরে স্ত্রী সুস্থ হয়ে যাওয়ায় কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই ঘটনা রতন আর মনে রাখেননি। অনেকেই হয়তো রাখেন না। কিন্তু ঘটনা রোজই ঘটে চলে।

যে সব রোগীদের অবস্থা গুরুতর, তাঁদেরই কল্যাণীর জেএনএম এবং কৃষ্ণনগরের সদর ও শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতায় রেফার করা হয়। জেএনএম-এ যদি এই ছবি হয়, কৃষ্ণনগরে আবার অন্য হিসেব। রোগীদের নিয়ে গিয়ে কলকাতার বড় বেসরকারি হাসপাতালে ঢোকাতে পারলেই এক শ্রেণির চালকের লাভ।

চাপড়ার যতীন মণ্ডল শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। সেখান থেকে রেফার করা হয় এনআরএস-এ। অ্যাম্বুল্যান্স চালক মাঝপথে তাঁদের বলে, ‘‘সরকারি হাসপাতাল! বেড পাবেন না। আমি পেশেন্ট নামিয়ে চলে আসব। মুশকিলে পড়বেন।’’ তা হলে উপায়? চালক জানান, বারাসতে ভাল নার্সিংহোম আছে। অগত্যা সেখানেই ভর্তি করানো হয় যতীনকে। তাঁর দাদা মাধব মণ্ডল বলেন, ‘‘তিন দিন পরে অবস্থা এত খারাপ হয় যে ভাইকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করাতে হয়।’’

সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পেয়েছেন এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক। তিনি জানাচ্ছেন, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতে পারলেই এক হাজার টাকা হাতে-হাতে মেলে। বিলের অঙ্কের উপরেও থোক টাকা ধরা থাকে।

একটা সময়ে জেএনএম-এ জরুরি বিভাগের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত বেসরকারি অ্যাম্বু্ল্যান্স। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অমর রায়। ওষুধ জাল করার অভিযোগে তিনি জেলে ঢোকার পরে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সও হাসপাতাল থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন ফের সিন্ডিকেট চালু হয়েছে এবং অমর রায়ের ওয়ার্ডের এক নেতা সেটি চালাচ্ছেন তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি।

জেএনএম হাসপাতালের সুপার নিলয় সিংহ অবশ্য দাবি করছেন, জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেননি। আপনি কি হাসপাতাল ঘুরে দেখেন না? সুপারের জবাব, ‘‘না, এমন কিছু কখনও চোখে পড়েনি। ধন্যবাদ।’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

College of Medicine & JNM Hospital Ambulance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE