স্কুলের গেট ভেঙে ঢুকে পড়া অ্যাম্বুল্যান্স। —নিজস্ব চিত্র।
সূর্যের আলো সবে ফুটেছে। একটু একটু করে আড়মোড়া ভাঙছে বেতাই বাজার। একটা-দু’টো করে খুলতে শুরু করেছে চায়ের দোকান। এমন সময়ই বিকট শব্দ। তার পরে চোখমুখ অন্ধকার। আর কিছু মনে নেই রিকশা চালক রবিন বিশ্বাসের।
সংজ্ঞা ফেরার পরে রবিন জানতে পারেন, বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা অ্যাম্বুল্যান্সের ধাক্কায় আহত হয়েছেন তিনি। এখন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। বেতাই বাজার সংলগ্ন বাস স্টপে ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ন্ত্রণ হারানো অ্যাম্বুল্যান্সটি একটি টিউবওয়েল, বিদ্যুতের খুঁটি, দোকান, ঠেলা গাড়ি ভেঙে ঢুকে পড়ে পাশের স্কুলে। সে সময় স্কুল খোলা থাকলে কী হতে পারত, তা ভেবেই শিউরে উঠছেন স্থানীয় বাসিন্দা অলোক দাস। তিনি বলেন, ‘‘ভাগ্যিস স্কুল খোলা ছিল না! আর কয়েক ঘণ্টা পরে দুর্ঘটনাটি ঘটলে কী হত, ভাবতেই ভয় করছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম পবিত্র সরকার (৪০) এবং রাম হালদার (৫৫)। পবিত্র এলাকার আনাজ বিক্রেতা এবং রাম বাসের সময় রক্ষক। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কৃষ্ণনগর-করিমপুর প্রধান সড়কের দু’পাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে বেতাই বাজার। সেখানে বাস স্টপের পাশে রয়েছে যাত্রী প্রতীক্ষালয়, বেতাই উচ্চবিদ্যালয় এবং বেশ কয়েকটি দোকান। স্কুলের সামনেই বেশ কিছুটা খোলা জায়গা রেয়েছে। ওই খোলা জায়গাতেই বাসের জন্য অপেক্ষা করেন অনেক বাস যাত্রী। বিশ্রামাগারের পাশে বসে বাসের টাইম টেবিলে নজর রাখতেন রাম। তাঁর সঙ্গে অন্য দিনের মতো আড্ডা দিচ্ছিলেন আরও কয়েক জন। হঠাৎই করিমপুর থেকে তেহট্টের দিকে বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসে অ্যাম্বুল্যান্সটি। আশপাশের লোকজনকে ধাক্কা দিয়ে স্কুলের বন্ধ গেট ভেঙে ঢুকে যায় সেটি।
এক প্রত্যক্ষদর্শী মৃণালকান্তি ঘোষ বলেন, “সকালে চায়ের দোকানে বসেছিলাম। হঠাৎই দেখি অ্যাম্বুল্যান্সটি খুব জোরে এসে টিউবওয়েল, বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে এ দিক ও দিক করতে করতে স্কুলের ভিতরে ঢুকে গেল। তার পরেই দেখি আহতরা ঘটনাস্থলে পড়ে কাতরাচ্ছেন।’’
ঘটনার পরে স্থানীয়রা আহতদের তেহট্ট মহাকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তেহট্ট হাসপাতাল থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়। শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে মৃত্যু হয় পবিত্রের এবং কল্যাণী হাসপাতালে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় রামের। বাকি চার আহত হলেন বাবুয়া মুখোপাধ্যায়, ভগীরথ হালদার, চন্দন হালদার এবং রবিন। হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। আহতের চিকিৎসায় যাতে কোনও খামতি না থাকে, সে জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন বেতাই বাজার কমিটি এবং এলাকার মানুষজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy