ঠিক মতো হাঁটারও জায়গা নেই। নবদ্বীপের পোড়া মা তলা ও বড় বাজারে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
প্রায় তিন দশক আগে কলকাতার বাগড়ি মার্কেটের মতোই মধ্যরাতের বিধ্বংসী আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছিল নবদ্বীপ গোঁসাইবাজারের প্রায় দু’শো দোকান। ১৯৮৬ সাল। তখন এ শহরে দমকল কেন্দ্র ছিল না। ছিল না ন্যূনতম সতর্কতা। ভোর ৫টায় যখন কৃষ্ণনগর থেকে দমকলের প্রথম ইঞ্জিনটি এসে পৌঁছয়, ততক্ষণে সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
এর পর তিন দশক কেটে গেলেও এই শহরের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র বড়বাজার-পোড়ামাতলা অঞ্চল কিন্তু এখনও তেমনই জতুগৃহ হয়ে আছে। উল্টে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানের সংখ্যা। এর মধ্যে ছোটখাটো বেশ কিছু অগ্নিকাণ্ড ঘটেও গিয়েছে। কিন্তু তা থেকে কেউ শিক্ষা নেয়নি।
পোড়ামাতলা, রাজার বাজার ও গোস্বামী বাজার নিয়ে প্রায় দুই বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়ানো বাজার চত্বরের উপরে নির্ভর করেন কালনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত বিরাট এলাকার মানুষ। মুদিখানা থেকে প্রসাধনী, কাপড় থেকে বাসনপত্র, মিষ্টি থেকে অলঙ্কার— যাবতীয় পাইকারি এবং খুচরো কেনাবেচা হয় ওই চত্বরে। কয়েক হাজার ছোট-বড় দোকান, গুদাম, ছোটখাটো কারখানা। লাখো মানুষের রুটিরুজি। নবদ্বীপের শতকরা সত্তর ভাগ ব্যবসায়ীর ব্যবসাকেন্দ্র।
শহরের সবচেয়ে ঘিঞ্জি অঞ্চলও ওই পোড়ামাতলা-বড়বাজার চত্বরই। রাজার বাজার এবং গোস্বামী বাজার মিলিয়েই বড়বাজার। চাল, মুড়ি-বাতাস, গুড়, মাছ, আনাজ, কাপড়, সোনা, দুধ, মাছ, জুতো, মশলা, ফল— সব কিছুরই আলাদা আলাদা ‘পট্টি’ রয়েছে। বেশির ভাগ এলাকাই সঙ্কীর্ণ। সাইকেলে যাওয়াও দুষ্কর। ফলে আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢোকার প্রশ্নই আসে না।
শহরের এই প্রাণকেন্দ্রে পোড়ামা, ভবতারিণী এবং ভবতারণ শিবের মন্দির। রোজ হাজার-হাজার মানুষ আসেন। তিন মন্দির ঘিরে কমবেশি ষাটটি দোকানে ঠাসা মনোহারি, প্লাস্টিক, খেলনা, ব্যাগের মতো দাহ্য বস্তু। দোকান সব প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা। মধ্যে যেমন-তেমন বিদ্যুৎ সংযোগ। মন্দিরে মোমবাতি বা ধূপ জ্বলছে সর্বদা। সব মিলিয়ে জতুগৃহ। কারও হেলদোল নেই। উল্টে আশা— “পোড়ামা-ই রক্ষা করবেন”।
বড়বাজারের অন্তর্গত বাজারগুলি ব্যক্তি মালিকানাধীন। যেমন গোস্বামী বাজারের মালিক সোনার গৌরাঙ্গ মন্দির কর্তৃপক্ষ। আবার রাজার বাজার চালায় নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতি। সেটির সম্পাদক নিরঞ্জন দেবনাথ বলেন, “বড়বাজারের যা অবস্থান, আগুন লাগলে দমকল ঢুকতে পারবে না। কিন্তু আশু সমাধানও নেই।”
মন্দিরের বর্তমান প্রধান স্বরূপ দামোদর গোস্বামী নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতে চাননি। যদিও ওই ঘিঞ্জি বাজারে কয়েকটি নলকূপ ছাড়া জলের উৎস নেই বললেই চলে। একটি প্রাচীন কুয়ো ছিল বাজারে, সংস্কারের অভাবে তার কী দশা, কেউ জানে না। নিরঞ্জন বলেন, “শুক্রবার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের ডেকে অগ্নি সুরক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে কথা বলা হবে।”
নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর ও শান্তিপুরের দমকলের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শক্তিরঞ্জন দে-র আক্ষেপ, “কেউ সামান্য অগ্নিসুরক্ষা বিধি মানে না। বেশির ভাগ দোকানে আগুন রোখার সামান্য উপকরণ নেই। পুরনো শহরের সঙ্কীর্ণ রাস্তা আর বেড়ে চলা দোকানের সংখ্যা বিপদ ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে। জতুগৃহে বসে কি আগুন নিয়ে খেলা উচিত?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy