Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
হেমন্তের পালা

সুলতানা নাকি শঙ্কর, ধন্দে দর্শক

আশ্বিন ফুরোলেই শিশির, আর স্কুল ঘরে লণ্ঠনের আলোয় পালার মহলা, হেমন্ত-রাতের সেই সব পালা গ্রাম জীবনের নিবিড় এক সংস্কৃতি ছিল। সেই স্মৃতি হাতড়াল আনন্দবাজার গিরিশচন্দ্রের বাগবাজারের নাট্য দলের গোবর্দ্ধন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এসে সেই অবৈতনিক নাট্য শিক্ষাকেন্দ্রের অধ্যক্ষ করা হয়েছিল। তারও দু’বছর আগে ১৮৯৭ সালে নিমতিতার জমিদার মহেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর বাবা দ্বারকানাথের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে কালের প্রেক্ষিতে অত্যাধুনিক নাটমঞ্চ।

লালবাগে যাত্রা উৎসবের একটি মুহূর্ত।

লালবাগে যাত্রা উৎসবের একটি মুহূর্ত।

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

তখনও সারা দেশে নাট্য আকাডেমি তৈরির কোনও স্বপ্ন দেখেনি কেউ। সেই ১৮৯৯ সালে কাশিমবাজার মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ নন্দী বহরমপুরে দেশের প্রথম নাট্য অ্যাকাডেমি গড়ে ছিলেন। নাম দিয়েছিলেন, ‘দ্যা কাশিমবাজার স্কুল অফ ড্রামা’।

গিরিশচন্দ্রের বাগবাজারের নাট্য দলের গোবর্দ্ধন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এসে সেই অবৈতনিক নাট্য শিক্ষাকেন্দ্রের অধ্যক্ষ করা হয়েছিল। তারও দু’বছর আগে ১৮৯৭ সালে নিমতিতার জমিদার মহেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর বাবা দ্বারকানাথের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে কালের প্রেক্ষিতে অত্যাধুনিক নাটমঞ্চ। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘হিন্দু থিয়েটার’। সেই মঞ্চে ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ ‘সাবিত্রী’ ও নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ‘চৈতন্যলীলা’ মঞ্চস্থ করেন। তারও প্রায় চার দশক আগে ১৮৫৮ সালে মুর্শিদাবাদ জেলা বাংলার অভিনয় জগতে নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে। কান্দির রাজ পরিবারের (তাঁদের পাইকপাড়ার রাজাও বলা হয়) উদ্যোগে ওই বছর একই সঙ্গে কলকাতায় বেলগাছিয়া নাট্যশালা ও কান্দিতে একটা নাটমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। কান্দির নাটমন্দিরের দারোদ্ঘাটন করেন বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগেরর অনুরোধ মেনে ওই নাটমন্দির পরে বিদ্যামন্দিরে রূপান্তরিত হয়। সেই জেলায় যাত্রাপালা নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। ওই আবেগকে মর্যাদা দিতে ২১ বছর আগে বহরমপুর শহরের ভৈরবতলা মাঠে বসেছিল ৯ দিনের এক যাত্রা উৎসব। প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন বহরমপুর রেপার্টরি থিয়েটারের কর্ণধার প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে কুঞ্জঘাটা থেকে গোরাবাজার পর্যন্ত ৭০-৭২টি অস্থায়ী মঞ্চে সারা শীত জুড়ে যাত্রাপালা অভিনীত হত। টিকিট কেটে ২০-২৫ হাজার দর্শক সেই যাত্রা দেখত। ’৯৭ সালে বহরমপুর শহরের ভৈরবতলা মাঠে ৯ দিনের প্রতিযোগিতামূলক যাত্রা উৎসবে অংশ নিয়েছিল ৯টি যাত্রাদল।’’ করগেটেড টিন দিয়ে ঘেরা ভাগীরথী পাড় বরাবর বিভিন্ন মাঠে বসত সেই যাত্রাপালার আসর। যাত্রাপালার কথা উঠতেই শৈশবের স্মৃতি ফিরে আসে ৬৬ বছরের প্রদীপ ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, ‘‘লোকের চাপে কখন খুলে দেবে সেই প্রত্যাশায় আমরা দল বেঁধে করগে়টেড টিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম। লোক কানায় কানায় পূর্ণ হলে টিন খুলে নেওয়া হত।’’

একই মঞ্চে একই রাতে পর পর দু’টো যাত্রা অভিনয়ও ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। বহরমপুর শহরের কোনও মাঠে ৫ দিনের কম যাত্রার আসর বসত না। বিভিন্ন কারণে অর্থ সংগ্রহের প্রধান উপায়ই ছিল ‘চ্যারিটেবল’ যাত্রাপালা। তবে সেই আমলে নারী চরিত্রের অভিনয় নিয়ে খুব সমস্যায় পড়তে হত যাত্রাদলগুলোকে। পুরুষদেরই অনেক ক্ষেত্রে নারী চরিত্রে অভিনয় করতে হত। নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিশেষ খ্যাতি আছে সম্প্রতি প্রয়াত বহরমপুরের ‘রূপশিল্পী’র কর্ণধার কার্তিক দত্তের। সুলতানা রিজিয়া চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অশীতিপর শঙ্কর চক্রবর্তীর কথা আজও বহরমপুর মনে রেখেছে। তবে কিছু মহিলা চরিত্র ছিলেন, জিযাগঞ্জ, আজিমগঞ্জ, নদিয়ার চাকদহ, বাদকুল্লা ও বর্ধমানের কাটোয়ায়। নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পারিশ্রমিকের বিনিমেয়ে ওই সব এলাকা থেকে তাঁদের নিয়ে আসা হত। হেমন্তের শিশির ঝরতেই গাঁ গঞ্জে সে স্মৃতির ফের ঘুম ভেঙেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jatra Village Autumn
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE