ধস: চাকদহে গঙ্গা ভাঙন। নিজস্ব চিত্র
কাদায় ছড়ানো খান কতক ইট। তা গোছাতে ব্যস্ত মাঝবয়সী খাদেজা মণ্ডল। সঙ্গে হাত লাগিয়েছে কচিকাঁচারাও। দূরে নদীর পাড় থেকে তারাও বয়ে আনছে ইট, ভাঙা বাঁশ।
ভাগীরথী নদীর দিকে আঙুল তুলে খাদেজা বললেন, ‘‘এখানে আমাদের বাড়ি ছিল। ওই নদী বাড়ি-ঘর গিলে খেয়েছে।’’ চাকদহের উত্তর সরাটি, রায়নগর এলাকায় এখন ঘরহারাদের হাহাকার। ভাগীরথীর জল কমতেই শনিবার রাত থেকে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে এই এলাকাগুলি।
জল নেমেছে বড়ঞার প্লাবিত এলাকাতেও। টানা দশ দিন জলবন্দি থাকার পরে বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে শনিবার রাতে জল নেমেছে. ফলে, বড়ঞার এই গ্রামগুলিতে জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে চিন্তা বাড়িয়েছে জলবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ।
গত চব্বিশ ঘণ্টায় চাকদহ থানার উত্তর সরাটি এবং রায়নগর এলাকায় গঙ্গার ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে সাতটি ঘর। বিপজ্জনক অবস্থায় কমবেশি ৫০টি ঘর। ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে বিঘার পর বিঘা চাষের জমিও। স্থানীয় এক বাসিন্দা আসগর শেখ বলেন, ‘‘আমাদের ১২ বিঘা চাষের জমি ছিল। আগের ভাঙনে তা ভাগীরথীতে চলে গিয়েছে। এবার মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও গেল।” চাকদহের বিডিও নিশীথ ভাস্কর পাল বলেন, “পঞ্চাশটি পরিবারকে দ্রুত সরিয়ে ফেলা জরুরি। এলাকার রাস্তাটি তলিয়ে গেলে অন্তত ২০০ পরিবারকে সরাতে হবে।” তিনি জানান, আশ্রয়হীনদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আপাতত তাঁদের ত্রিপল, চাল দেওয়া হয়েছে। যাঁদের জমি রয়েছে তাঁদের বাড়ি করে দেওয়া হবে। যাদের জমি নেই তাঁদের জমি পাট্টা দিয়ে বাড়ি করে দেওয়া হবে।
তবে নদিয়ার বেথুয়াডহরি থেকে বর্ধমানের অগ্রদ্বীপের যোগাযোগের রাস্তার উপর কুলেপোতায় গত কয়েক দিন ধরেই গঙ্গার জল বইছে। রবিবারও সেই জল নামেনি। ফলে এই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে না। নাকাশিপাড়ার বিডিও সমর দত্ত বলেন, ‘‘গঙ্গার বাড়তি জল যাতে আটকে না যায় সে জন্য ওখানে রাস্তা নিচু। তবে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে না।’’
নতুন করে বৃষ্টি শুরু না হওয়ায় শনিবার থেকেই জল নামতে শুরু করে বড়ঞার নানা এলাকায়। রবিবার প্রায় সব এলাকা থেকেই জল নেমে গিয়েছে। বড়ঞা ও ভরতপুর ১ ব্লকে সুন্দরপুর ও গড্ডা পঞ্চায়েতের দেড় হাজার পরিবার গত কয়েক দিন ধরেই জলবন্দি। এই সব এলাকায় সর্দি-জ্বর এবং পেটের রোগ দেখা দিয়েছে। এর মোকাবিলায় এই সব এলাকায় স্বাস্থ্যশিবির করেছে প্রশাসন।
কান্দি মহকুমা হাসপাতালে দিনে ৮৫০ রোগী বহির্বিভাগে আসছেন। তার মধ্যে সাড়ে পাঁচশো হয় জ্বর না হয় পেটের রোগ নিয়ে আসছেন। এলাকায় এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা জলে ডুবে থাকা টিউবওয়েলের জল পান না করার জন্য প্রচার করছেন। জল ফুটিয়ে খেতে বলা হচ্ছে বাসিন্দাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy