সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কথায়, শীত মানেই পদ্মায় হাঁটুজল। বর্ষায় যে নদীর ভরসায় অনেকটাই নিশ্চিন্তে থাকে বিএসএফ কিংবা সীমান্তের মানুষ, সেই নদীই শীতকালে অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সীমান্তের যে সব এলাকায় এখনও পর্যন্ত তারকাঁটার বেড়া নেই সেখানে কার্যত সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে নদীই। শীতে নদীতে জল কম থাকায় এক দিকে যেমন হাঁটুজল পেরিয়ে এপারে চলে আসে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা, তেমনই নদী দিয়ে গরু পাচারও অনেকটা সহজ হয়ে যায়। রানিনগরের ইনাসদ্দিন মণ্ডল যেমন বলেন, “নদীতে জল থাকলে আমরাও অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকি। নদীতে জল থাকলে ওপার থেকে এপারে আসা অনেকটাই কঠিন। কিন্তু শীতে তো সেই জল থাকে না, ফলে নদী পেরিয়ে সীমান্ত পারাপারও এই সময় অনেক সহজ হয়ে যায়। সেই জন্য রাতবিরেতে একটা আতঙ্ক তো থেকেই যায়।”
ঋতুর সঙ্গে তাই বদলে যায় পাচারের কৌশলও। বিএসএফসূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্তের যেখানে তারকাঁটার বেড়া নেই, সে দিক দিয়েই শীতকালে গবাদি পশু পাচার বেশি হয়। কিন্তু যেখানে তারকাঁটা রয়েছে, সেখানে গুরুত্ব পায় কাশির ওষুধ ও গাঁজা। কোনও প্যাকেটের মধ্যে কয়েক কেজি গাঁজা দিব্যি ছুঁড়ে ফেলা যায় কাঁটাতারের ওপারে। আর কাশির ওষুধ? বিএসএফ সূত্রে খবর, ডিল জ্যাকেটের পাশাপাশি শীতে কাশির ওষুধ পাচারের আর এক অভিনব উপায় বের করেছে পাচারকারীরা। কালভার্টের তলায় সে একটা প্রমাণ সাইজের পাইপ নিয়ে বসে যাচ্ছে। পাইপের মুখ থাকছে কাঁটাতারের ওপারে, তারপর পাইপের এক মুখ দিয়ে সে একটা একটা করে কাশির ওষুধের বোতল ঢুকিয়ে দিচ্ছে আর অনায়াসে সেটা পৌঁছে যাচ্ছে ওপারে। দূর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে সে পাচার করছে, নাকি খেতের কোনও কাজ করছে। ফলে নজর রাখতে হচ্ছে কালভার্টের তলাতেও।
সীমান্তরক্ষী বাহিনীই বা কী করবে, তার উত্তর মেলে না। কেননা, পোশাক নিয়ে বিএসএফের সন্দেহ যে সব সময় অমূলক, এমনটা ভাবলেও ভুল হবে। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি, রানিনগর সীমান্তে গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক বিকিয়েছে ‘ডিল-জ্যাকেট’ (এক প্রকার কাশির ওষুধ। সীমান্ত এলাকায় যার ডাকনাম ‘ডিল’।) বিএসএফসূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জ্যাকেটটি দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ জ্যাকেটের মতোই। কিন্তু জ্যাকেটের ভিতরে রয়েছে অজস্র ছোট ছোট পকেট। যে পকেটগুলোতে অনায়াসে গলে যায় ওই ওষুধের বোতল। ফলে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই জ্যাকেটের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে ওই ওষুধ। তবে শুধু ‘ডিল’ই নয়। মুর্শিদাবাদ সীমান্তে চাদর কিংবা জ্যাকেটের আড়ালে সহজে বয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তেমন আরও অনেক কিছুই পাচার হওয়ার নজির রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy