Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘মুক্তি’ দশ বছর পরে, স্বদেশে চললেন মুর্শেদা

বৃহস্পতিবার সকালে জেলা গোয়েন্দা দফতরের কর্তারা বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল থেকে মুর্শেদাকে গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে তুলে দেন নদিয়ার হরিণঘাটার ৪৮ নম্বর বিএসএফ ব্যাটেলিয়নের হাতে। সেখান থেকে উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে মুর্শেদাকে পাঠান হয় বাংলাদেশে।

বহরমপুর থেকে বাড়ির পথে। নিজস্ব চিত্র

বহরমপুর থেকে বাড়ির পথে। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৬
Share: Save:

‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়...’—আত্মীয়, পরিজন ছেড়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে মানসিক হাসপাতালের আবাসিক হিসেবে টানা পাঁচ বছর পরে ছাড়া পেয়ে মুক্তির আনন্দে গেয়ে উঠলেন বাংলাদেশের জামালপুরের মুর্শেদা খাতুন। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা গোয়েন্দা দফতরের কর্তারা বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল থেকে মুর্শেদাকে গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে তুলে দেন নদিয়ার হরিণঘাটার ৪৮ নম্বর বিএসএফ ব্যাটেলিয়নের হাতে। সেখান থেকে উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে মুর্শেদাকে পাঠান হয় বাংলাদেশে। সেখানে মুর্শেদাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন পরিজনরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের জামালপুর জেলার মেলানদহ থানার পশ্চিম ব্রাহ্মণপাড়ার বাসিন্দা নমাজউদ্দিন মিঞার মেয়ে মুর্শেদার বিয়ে হয়েছিল। তাঁর দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে বিরোধের জেরে স্বামী হাবিবুর রহমান তাঁকে বাবার বাড়িতে রেখে আসার নাম করে কোনও এক স্টেশনে রেখে দিয়ে চলে যান। সে ঘটনা ২০০৮ সালের। পরিবারের লোকজনের কাছে তখন থেকেই ‘নিখোঁজ’ মুর্শেদা। পরিবারের লোকজন সেই সময়ে থানায় নিখোঁজের ডায়েরিও করেন। কিন্তু তার খোঁজ মেলেনি।

পরে বর্ধমান থানার পুলিশ মুর্শেদাকে উদ্ধার করে আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যায়। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সুপার প্রশান্ত চৌধুরী জানান, বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগে ভুগছিলেন মুর্শেদা। এখন তিনি সুস্থ। কিন্তু তিনি শুরুতেই বাড়ির সঠিক ঠিকানা জানাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অঞ্জলি’র চেষ্টায় ও ভারত-বাংলাদেশ হাই-কমিশনের সহায়তায় ওই রোগিনী বাড়ি ফিরে যেতে পারলেন।

অঞ্জলি সংস্থার বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল শাখায় সুস্থ আবাসিকদের গানের দিদিমণি স্বাতীলেখা ধরগুপ্তের এক মামা-শ্বশুর রবি সরকার থাকেন বাংলাদেশে। তিনি দু’বছর আগে বহরমপুর বেড়াতে এলে স্বামীলেখা মুর্শেদার কথা জানায়। সেই মত রবি সরকার বাংলাদেশ ফিরে গিয়ে জামালরপুরের এক বন্ধুকে জানান। সেই সূত্রে মুর্শেদার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার পরেই বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করা হয়। কিন্তু তার পরেও বিভিন্ন আইনি জটিলতায় ঝুলে ছিল মুর্শেদার বাড়ি ফেরা। অঞ্জলির কর্ণধার রত্নাবলী রায় বলছেন, ‘‘মুর্শেদাকে বাড়ি পাঠাতে পারছি, সেটা নিশ্চয় আনন্দের। আমাদের কাছে এটা একটা জয়। তবে আইনি জটিলতাগুলি যত দিন দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি। তত দিন আমাদের দুশ্চিন্তা থাকবে। ওই জটিলতাগুলি কাটাতে পারলে মুর্শেদার মত আরও যারা রয়েছেন, তাঁদের বাড়ি পাঠান সহজ হবে। তাই দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।’’

এ দিকে, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ের কাছে ফিরতে পারার কথা শুনে দারুণ খুশি মোর্শেদা খাতুন। মুর্শেদা জানান, কত দিন পরে বাড়ি ফিরতে পেরে তিনি খুশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladeshi Return Handover
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE