Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খুলল ঘর, স্বস্তি কিন্তু ফিরল না

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনপুর ক্যাম্পাসে সকাল থেকেই আলো নেই, জল নেই, খাবার নেই। আন্দোলনে শামিল ছাত্রছাত্রীদের দাবি, কর্তৃপক্ষের স্বার্থবাহী পড়ুয়াদের একাংশ শুক্রবার রাতেই ক্যান্টিন মালিকদের শাসিয়ে বলে গিয়েছিল, ‘ক্যান্টিন খোলা যাবে না।’ ক্যাম্পাস লাগোয়া খাবারের দোকানেও শাসিয়ে রাখা হয়েছিল।  

বিসিকেভি-র হস্টেল ছাড়ছেন ছাত্রছাত্রীরা, বাসের অপেক্ষায়। ছবি: প্রণব দেবনাথ

বিসিকেভি-র হস্টেল ছাড়ছেন ছাত্রছাত্রীরা, বাসের অপেক্ষায়। ছবি: প্রণব দেবনাথ

মনিরুল শেখ
হরিণঘাটা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২৯
Share: Save:

ঝাঁকড়া একটা গাছের ছায়ায় উদ্বিগ্ন মুখে বসেছিলেন হেমন্ত সিংহ। বাড়ি মধ্যপ্রদেশে। ঘরে পাখা চলছে না। জলও নেই। যে সতীর্থদের বাড়ি কাছাকাছি, তাঁরা ততক্ষণে ব্যাগ গুছিয়ে হাঁটা দিয়েছেন।

হেমন্ত ট্রেনের টিকিট পাননি। অথচ বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রাতারাতি হস্টেল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। হেমন্ত বা ওড়িশার তপন কুমারদের মতো ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়ারা আটকে পড়েছেন। বিরস মুখে হেমন্ত বলছিলেন, ‘‘পরীক্ষাগারে বেশ কিছু কাজ চলছিল। এ ভাবে সব ফেলে চলে যেতে হলে পিএইচডি-র কাজই আখেরে পিছিয়ে যাবে!’’

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনপুর ক্যাম্পাসে সকাল থেকেই আলো নেই, জল নেই, খাবার নেই। আন্দোলনে শামিল ছাত্রছাত্রীদের দাবি, কর্তৃপক্ষের স্বার্থবাহী পড়ুয়াদের একাংশ শুক্রবার রাতেই ক্যান্টিন মালিকদের শাসিয়ে বলে গিয়েছিল, ‘ক্যান্টিন খোলা যাবে না।’ ক্যাম্পাস লাগোয়া খাবারের দোকানেও শাসিয়ে রাখা হয়েছিল।

মাতঙ্গিনী আবাসের এক ছাত্রী বলেন, ‘‘পুরোটাই পরিকল্পনা মাফিক করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কাজের লোকজনকে বলে দেওয়া হয়েছিল, শনিবার সকালে রান্না করতে আসতে হবে না। অথচ হস্টেল খালি করার কথা জানিয়ে উপাচার্যের নির্দেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয় মাঝরাতে।’’

আন্দোলনের প্রথম সারির এক নেতার দাবি, ‘‘অনেকের বাড়িতেই লোক পাঠানো হয়েছে। দিন তিনেক আগে আমার বাড়িতে স্থানীয় থানার পুলিশ যায়। বলে, ‘ছেলেকে বাড়ি নিয়ে চলে আসুন। আন্দোলন বন্ধ করতে বলুন। তা না হলে ছেলের নিরাপত্তার কোনও দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না।’ কিন্তু আমরা ক্যাম্পাস ছাড়িনি।’’

হুগলির এক ছাত্র বলেন, ‘‘এখানে কেউ কেউ চাকরি পেয়েছেন দল করে। কয়েক জন সিনিয়র দাদাও রয়েছেন, যাঁরা এক সময়ে নির্দিষ্ট একটি ছাত্র সংগঠন করতেন। কাজও পেয়েছেন দলের সৌজন্যেই। এখন তাঁরাই বাড়িতে গিয়ে বলছেন, ছেলে খারাপ হয়ে গিয়েছে। এখনই ছেলেকে বাড়ি নিয়ে চলে আসুন। না হলে কিন্তু ফল খারাপ হবে।’’

আন্দোলনকারী ছাত্রদের তরফে সৌরদীপ দত্ত অভিযোগ করেন, ‘‘বাড়িতে লোক তো পাঠানো হচ্ছেই, ক্যাম্পাসের বাইরে গেলেও তৃণমূলের লোকজন ভয় দেখাচ্ছে। আবার কর্তৃপক্ষ ও বাইরের তৃণমূল নেতাদের অনুগামী ছাত্রেরা মাঝেমধ্যেই গুজব রটাচ্ছে, আমাদের খুন করা হবে। বাসে উঠলে বলা হচ্ছে, ওই বাসে বোমা মারা হবে।’’ তৃণমূল এবং টিএমসিপি নেতারা অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৈঠক করার সন্ধ্যায় হস্টেল ফের খুলে দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রার জয়ন্ত সাহা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, ছাত্রছাত্রীদের হস্টেলে ফিরতে অনুরোধ করা হচ্ছে। সে কথা জানার পরে দূরের পড়ুয়ারা অনেকে মাঝপথ থেকে ফিরতে শুরু করেন। তবে দুই ডিনকে সরানোর যে দাবিতে আন্দোলন চলছিল তা পার্থ মানেননি। ছাত্রছাত্রীদের প্রধান দাবি ছিল, শাসক দলের অনুগামী ছাত্রদের প্রতি পক্ষপাতে অভিযুক্ত ডিন অব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার গৌতম চক্রবর্তী এবং কৃষি অনুষদের ডিন শ্রীকান্ত দাসকে পদ থেকে সরাতে হবে। দুই ডিনই এ দিন কল্যাণীতে হাজির ছিলেন। এই সঙ্কট কাটাতে ডিনেরা নিজেরাই বা সরে যাচ্ছেন না কেন?

কৃষি অনুষদের ডিন শ্রীকান্ত দাস পাল্টা বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম ক্যাম্পাস নিয়ম মেনে চলুক। কিছু ছাত্র তা মানতে চায়নি। তারাই আন্দোলন করছে। আমরা ওই অন্যায় দাবির কাছে মাথা নত করব কেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bidhan Chandra Krishi Viswavidyalaya Protest BCKV
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE