Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দোকানের বাইরে ডেকে নিয়ে খুন তৃণমূল নেতাকে

সোমবারের ভোটের সকাল সে ভাবেই শুরু হয়েছিল। তবে খুন-হানাহানির সেই মৃত্যু মিছিল সে রাতেই শেষ হয়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
দত্তপুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০০:৩৩
Share: Save:

বিরোধীরা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিলেন ‘নির্বাচন তো হবে না, হবে ছুরি-বারুদের সন্ত্রাস’!

সোমবারের ভোটের সকাল সে ভাবেই শুরু হয়েছিল। তবে খুন-হানাহানির সেই মৃত্যু মিছিল সে রাতেই শেষ হয়নি। তার জের রয়ে গেল মঙ্গলবারের সকালেও। এ দিন, নিজের দোকান থেকে ‘বাইরে শোন’ বলে ডেকে তৃণমূলের এক বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্যকে পিটিয়ে, কুপিয়ে খুন করল কয়েক জন। তাদের পরিচয়? তৃণমূলের আঙুল উঠেছে, এলাকার বিজেপি কর্মীদের দিকে। বিরোধীরা পাল্টা বলছেন, জনতার ‘প্রতিরোধেই’ ধানতলার দত্তপুলিয়া শিমুলতলায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রণব বিশ্বাস ওরফে বাবু (৪৫)।

মঙ্গলবার সকালে আসবাবের দোকানে বসে ছিলেন বাবু। সেই সময়ে তাঁকে দোকান থেকে টেনে বের করে রাস্তার উপরেই বেধড়ক মারধর করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান প্রণব। প্রণব দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বরণবেরিয়া এলাকার বিদায়ী সদস্য। এ বার ওই আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় ওই আসনে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়ান প্রণবের স্ত্রী অমরী বিশ্বাস। প্রণব রানাঘাট (উত্তর-পূর্ব) তৃণমূল বিধায়ক সমীর পোদ্দারের ঘনিষ্ঠ বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

পুলিশ জানায়, অভিযোগ হয়নি। কয়েক জনকে আটক করে জেরা শুরু করেছে পুলিশ। এ দিন সকাল নটা নাগাদ শিমুলতলা এলাকায় দোকানে বসেছিলেন প্রণব। সেই সময় কয়েকজন এসে তাঁকে দোকান থেকে বাইরে ডাকে বলে জানাচ্ছেন আশপাশের লোকজন। প্রণব বেরিয়ে আসতেই তাকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে বাঁশ দিয়ে পেটানো শুরু হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোও হয়। তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসতেই বেগতিক বুঝে আক্রমণকারীরা পালায়। স্থানীয় মানুষ তড়িঘড়ি তাঁকে দত্তপুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান প্রণব।

২০১৩ সালে প্রণব প্রথম ভোটে লড়াই করে জয়ী হয়েছিলেন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ভোট জেতার পর তিনি ‘বদলে’ যান। অসম্ভব ‘দুর্ব্যবহার’ করতেন পড়শিদের সঙ্গে। শুধু বিরোধী নয়, দলের কর্মীদের একাংশের মধ্যেও প্রণবকে নিয়ে ক্ষোভ ছিল বলে তৃণমূলের এক জেলা নেতা কবুল করছেন। তাঁর ব্যবহারের জন্যই অমরীর জয় নিয়ে সন্দিহান ছিলেন প্রণব বলে জানা গিয়েছে। দলের এক যুব নেতা বলছেন, ‘‘আর তা নিয়েই ভোটের আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের রীতিমতো চমকে ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, অনেককে ভোট দিতে যেতে বারণ করেছিলেন। পরের দিনও কয়েক জনকে ডেকে ধমক-ধামক দিতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে।’’ সেই চাপা ক্ষোভ থেকেই কি এই খুন? প্রণবের ভাগ্নে অভি সিকদার অবশ্য বলছেন, “ও সব বাজে কথা, আমার মামা ভালমানুষ ছিলেন। মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। বিজেপি আমার মামাকে খুন করেছে।” বিধায়ক সমীরবাবু বলেন, “প্রণব তো এলাকায় ভাল ছেলে বলেই পরিচিত। মানুষের সুখে দুঃখে পাশে থাকত। প্রণব কখনও কাউকে ভয় দেখিয়েছে বলে শুনিনি।’’ আর বিজেপি’র দক্ষিণ-নদিয়া জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। আমি যতদূর শুনেছি, উত্তেজিত জনতা তাকে মারধর করেছে। এখন আমাদের ঘাড়ে দোষ দিচ্ছে তৃণমূল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2018 Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE