প্রতীকী ছবি।
মারামারি, বুথ দখল, ব্যালট ছেঁড়া, খুন, জখম, ছাপ্পা, সন্ত্রাস, হুমকি—দুই জেলায় স্রোতের মতো ঘটনা ভোটের সারাদিন। ‘অবাধ ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনের জন্য নিরাপত্তার যে শক্ত দেওয়াল তৈরির দরকার ছিল সেটাই সর্বাঙ্গে ছিদ্র নিয়ে ধরা পড়েছে সাধারণ মানুষের চোখে। দেওয়াল তৈরির কারিগর পুলিশ কর্মীদের দিকে উঠেছে আঙুল। কেন তাঁরা মানুষের ভরসা হয়ে উঠতে ব্যর্থ হলেন, কেন ছাইয়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতো গোলমালের সময় তাঁদের খুঁজে বেড়াতে হল, কেন গণতন্ত্রের ঢাল হয়ে উঠতে পারলেন না তাঁরা—উঠেছে সেই সব প্রশ্ন। শাসকদলের হয়ে কাজ করার তাগিদে তাঁরা চোখে ঠুলি বেঁধে রেখেছেন এমন অভিযোগে বিদ্ধ হতে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু পুলিশ ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছেন ‘ফোর্স’ এর অপ্রতুলতার উপর।
‘‘এক জন লাঠিধারী সিভিক ভলান্টিয়ার ও এক সশস্ত্র কনস্টেবল দিয়ে কি আর গোটা বুথ সামলানো যায়! নিজেদের নিরাপত্তার কথাও তো পুলিশকে ভাবতে হচ্ছে। তাদেরও তো পরিবার রয়েছে’’—বলছিলেন এক পুলিশকর্তা। পাশে বসা অধস্তন কর্মী মন্তব্য করলেন, ‘‘সব দিক থেকে পুলিশের বিপদ! শাসকদলের প্রার্থী হেরে গেলে অভিযোগ উঠবে, পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে হারিয়ে দিল। তখন ওই বুথের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হবে।’’
নিরপেক্ষ নির্বাচন করানোর জন্য সক্রিয় হতে গিয়ে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও বাদ যায়নি পঞ্চায়েত ভোটে। মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের কথা ধরা যাক। স্থানীয় একটি বুথ দখল করার চেষ্টা করছিল রাজনৈতিক দলের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীরা। বাধা দিতে গিয়ে বেদম মার খান এক কনস্টেবল। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। তেহট্টের গোবিন্দপুরেও উড়ে আসা ইটে জখম হন এক এসআই। নদিয়ার দিগনগরেও ইটের ঘায়ে আহত হন কোতোয়ালির আইসি। কল্যাণী থেকে করিমপুর, জলঙ্গি থেকে জঙ্গিপুর, সর্বত্র পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগই বেশি। চাপড়ার গোখরাপোতা বুথের এক বৃদ্ধ তো বুথের একধারে বসে থাকা পুলিশ কর্মীর দিকে আঙুল তুলে বলেই ফেলেছেন, “ওরা আঙুলে কালি লাগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ভোট হয়ে গিয়েছে। বাড়ি চলে যান’। আপনারা পুলিশরা রয়েছেন কীসের জন্য?’’ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকেই পুলিশের গায়ে ছাপ লেগে গিয়েছিল শাসক দলের পক্ষ নেওয়ার, যা শেষ পর্যন্ত ওঠেনি বলে অভিযোগ।
শক্তিপুর থানার বলিহারপাড়া, রঘুনাথগঞ্জ-১ ব্লকে একাধিক বুথে পুলিশের সামনেই ভোট লুট হয় বলে অভিযোগ। ভরতপুর-১ ব্লকের গুন্দরিয়া পঞ্চায়েতের বৈদ্যপুরের ২১ নম্বর বুথে ভোটকর্মীদের মারধর করে ব্যালট বাক্স লুট করে দুষ্কৃতীরা। প্রাণ ভয়ে বুথ ছেড়ে পালায় সিভিক ও পুলিশকর্মী। বুথ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে পুলিশের টহলদারি দু’টি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও পুলিশের পৌঁছতে ঘণ্টা খানেক লেগে যায়! ভরতপুর-১ ব্লকের দক্ষিণ ভরতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ ও ১০ নম্বর বুথে পুলিশ থাকা সত্ত্বেও ভরতপুর-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নুর আলম শেখ তাঁর অনুগামীদের নিয়ে ছাপ্পা ভোট দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
খড়গ্রামে এড়োয়ালি ও পারুলিয়া এলাকায় পুলিশের সামনেই ভোট গ্রহণের সময় বোমাবাজি চলে। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। চাচণ্ড ১৮২ নম্বর বুথে ছাপ্পা চলার সময় তিন জন সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিশ কর্মী বেঞ্চে বসে কাগজ পড়তে ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। রানাঘাটের ব্যাসপুর, চাকদহের হিংনাড়া, ঘেটুগাছি— বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোটের সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। একই অভিযোগ তেহট্ট এলাকায়।
তবে ঘোর স্বস্তিতে দুই জেরা পুলিশ কর্তারা। মুর্শিদাবাদের মুকেশ কুমার বলেছেন, ‘‘পুলিশ ভাল কাজ করেছে বলে ভোট শান্তিতে হয়েছে।’’ নদিয়ার পুলিশ সুপার সন্তোষ পাণ্ডের বক্তব্য, “গোলমালের খবর পেয়েই ফোর্স পৌঁছে গিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy