Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ঝাঁঝ হারিয়ে ভোটের বোলান স্তুতিময়

শোরগোল, তর্কাতর্কি, হাতাহাতি বেঁধে যেত সভায়। কোন রাজনৈতিক দলকে বোলানের পালায় ঠেস দেওয়া হয়েছে, কোন দলের কোন নেতার কুকীর্তি নিয়ে মস্করা করেছেন গান-বাঁধিয়েরা তা নিয়ে জোর আলোচনা চলত গ্রামীণ আড্ডায়।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০১:১৭
Share: Save:

ভোটের বোলান এক কালে এক কাণ্ড ছিল বটে!

শোরগোল, তর্কাতর্কি, হাতাহাতি বেঁধে যেত সভায়। কোন রাজনৈতিক দলকে বোলানের পালায় ঠেস দেওয়া হয়েছে, কোন দলের কোন নেতার কুকীর্তি নিয়ে মস্করা করেছেন গান-বাঁধিয়েরা তা নিয়ে জোর আলোচনা চলত গ্রামীণ আড্ডায়। কোন কেলেঙ্কারি বোলানের প্রধান প্রতিপাদ্য হতে পারে তা নিয়ে জল্পনারও অন্ত ছিল না। কিছুটা ভয়ে থাকতেন নেতারাও, পাছে ভোটের মুখে হাটে হাঁড়ি ভেঙে অস্বস্তিতে ফেলে বোলানের আসর।

কিন্তু দিন বদলেছে, ঝাঁঝ কমেছে বোলানের। রাজনৈতিক বিষয়, নেতাদের পারা-না পারা, কুকীর্তি-সুকীর্তি নিয়ে বোলান শিল্পীরা যেন অনেকটা সতর্ক, সঙ্কুচিত। তুলনায় তাঁরা আগ্রহী চটুল নাচগান, সাংসারিক পালা, রসালো পরকীয়া প্রেমে। তাতে দর্শকও এখন বেশি আসে। শিল্পীরাই স্বীকার করছেন, যতটুকু রাজনৈতিক বিষয়বস্তু আনা হয় তাতেও শুধু শাসকের স্তুতি। দোষত্রুটি চিহ্নিত করার অতীত ঐতিহ্য সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয় কিছুটা সরকারের রোষে পড়ার ঝামেলা এড়াতে আর কিছুটা দর্শক টানতে। কারণ, মানুষ নাকি এখন পালা দেখতে এসে রাজনৈতিক কচকচি চায় না, চায় নিখাদ মনোরঞ্জন।

নদিয়ার বোলান শিল্পীদের সিংহভাগ যেমন জানিয়েই দিয়েছেন, এ বারে পঞ্চায়েতের আগে বোলানে তাঁরা ঢেলে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশংসার কথা বলছেন। শিল্পী বুদ্ধিশ্বর ঘোষের কথায়, ‘‘গ্রামের মানুষ উপকৃত বর্তমান শাসক দলের কাছে। সেই কথাই বোলানে বলেছি। লোকশিল্পীদের ভাতা থেকে গ্রামে শৌচাগার— সব কিছুর সুখ্যাতি রাখা হয়েছে বোলানে। শ্রমিক মেলা, কন্যাশ্রী মেলা, বার্ধক্য ভাতার পাওয়ার বয়সসীমা কমিয়ে ষাটে আনা-র মতো ঘটনাকেও তুলে ধরা হয়েছে।’’ তুলনায় মুর্শিদাবাদের বোলানে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার হালকা রেশ থাকছে। সেখানে পঞ্চায়েত ভোটের আগে শোনা যাবে স্কুলের শিক্ষকদের ফাঁকিবাজি থেকে সরকারি দফতরে ঘুরে কাজ না-পাওয়ার ইতিবৃত্ত কিম্বা সচ্ছ্বলদেরও দু’টাকা দরে রেশনের চাল পাওয়ার দুর্নীতির গল্প। শোনা যাচ্ছে, এ বারের বোলানে বেলডাঙা ও শক্তিপুর স্কুলের মিড-ডে মিলের দুর্নীতিও স্থান পেয়েছে। স্কুলবাড়ি রং করার সরকারি নির্দেশ ঘিরে বিভ্রান্তিও থাকবে বোলানে। এই মুর্শিদাবাদের অনেক গ্রাম বোলানে পরিবেশিত রাজনৈতিক কাহিনি ঘিরে বহু রক্তক্ষয়ী গোলমালের সাক্ষী। শক্তিপুর বা বেলডাঙায় আগে চার দিন ধরে বোলানের প্রতিযোগিতা হত। সেখানে রাজনৈতিক বিষয়-নির্ভর পালাকে কেন্দ্র করে গন্ডগোল ছিল অনিবার্য। ১৯৬৭ সাল থেকে বোলান নিয়ে গবেষণা করছেন মুর্শিদাবাদের সন্তোষরঞ্জন দাস। প্রবীণ মানুষটির আক্ষেপ, সাহসী-প্রতিবাদী চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে আজকের বোলান। সমালোচনা বদলে গিয়েছে সরকারের স্তুতিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE