Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মারমুখী ময়দানে সদাব্যস্ত ক্যাপ্টেন

রবিবার সকালেই যেমন নাকে-মুখে কিছু গুঁজে কৃষ্ণনগর (সদর) ও তেহট্ট মহকুমা জুড়ে চরকি কাটতে বেরিয়ে পড়েছিলেন তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। মুখে তাঁর এক কথা, ‘‘আত্মতুষ্টিতে ভোগা চলবে না।”

বুথের পথে। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

বুথের পথে। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০১:১৪
Share: Save:

পরীক্ষার ফল অনেকটা জানাই। যেখানে শক্ত লড়াই হতে পারত, তার অনেক জায়গাতেই তৃণমূল ছাড়া আর কারও মনোনয়ন জমা পড়েনি। ফলে, কার্যত একপেশে ভোটে বরং দ্বিতীয় হওয়ার লড়াইটাই প্রবল। আর লড়াই মাথা বাঁচানোর।

তবে ফল যা-ই হোক, ভোট যখন হচ্ছে, নানা শিবিরের সেনাপতিদের তাই মাথা এবং গা ঘামাতেই হচ্ছে।

রবিবার সকালেই যেমন নাকে-মুখে কিছু গুঁজে কৃষ্ণনগর (সদর) ও তেহট্ট মহকুমা জুড়ে চরকি কাটতে বেরিয়ে পড়েছিলেন তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। মুখে তাঁর এক কথা, ‘‘আত্মতুষ্টিতে ভোগা চলবে না।” কল্যাণী ও রানাঘাটের নেতাদের ফোন করেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা। টেনশন হচ্ছে নাকি? ঝটিতি জবাব এল, “টেনশনের তো কারণ নেই। আমাদের কর্মীরা সারা বছর মানুষের সঙ্গে থাকেন। তাই সোমবার মানুষ আমাদের সঙ্গেই থাকবে।”

কৃষ্ণনগর পার্টি অফিসে বসে তখন টেলিফোন আর মোবাইলে অনর্গল নানা এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে চলেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে। বলছেন, “মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। কোনও ভাবেই বুথ ছাড়া যাবে না।” তারই ফাঁকে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গেও সেরে নিয়েছেন বৈঠক। বলছেন, “কর্মীদের নিরাপত্তার কথাটাই মাথায় ঘুরছে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহাও বলছেন, “ভোটটা ভালয়-ভালয় কাটলে বাঁচি।”

গত ভোটেও সে ভাবে কল্কে পায়নি বিজেপি। কিন্তু এ বার ভোট ঠিকঠাক হলে অনেক জায়গায় তারা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দিতে পারে বলে মনে করছে তারা। কিন্তু হামলার খবর কমছে না। দলের নদিয়া (উত্তর) সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের চোখেমুখে তাই টেনশনের ছাপ স্পষ্ট। বিকেলে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে দলীয় কর্মীদের দেখে বেরোনোর মুখে বললেন, “খুব চিন্তায় আছি, ওদের হামলায় কোনও কর্মীকে হারাতে হবে না তো?”

শনিবার প্রায় গোটা রাত জেগেই কেটেছে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের। বারবার বেজেছে মোবাইল আর এসেছে হামলার খবর। এ দিন সকালে বহরমপুরে জেলা অফিসের দোতলায় টিভির সামনে বসে লাল চায়ের কাপ হাতে তিনি বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোট তৃণমূল হতে দেবে না। তাদের সঙ্গত করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ বাহিনীও। তাই টেনশনে আছি।’’

টেনশনে রয়েছেন শাসক দলকে ‘টক্কর’ দেওয়া কংগ্রেস প্রার্থী হুমায়ুন কবীরও। তিনি জানান, সোমপাড়া ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকায় দুষ্কৃতীদের দাপাদাপির খবর এসেছে মাঝরাত পর্যন্ত। সারা দিন কেটেছে সন্ত্রাস মোকাবিলার ছক কষতে-কষতে। তাঁর দাবি, ‘‘ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা যাদের, তারা তো তৃণমূলের বি-সি গ্রেড নেতার দেহরক্ষী হয়ে গিয়েছে। বড় টেনশন সেটাই!

সাতসকালে উঠে চিনি ছাড়া চা খেয়ে ইংরেজি-বাংলা নানা কাগজ খুঁটিয়ে পড়া প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বহু দিনের অভ্যেস। এ দিনও তার ব্যত্যয় হয়নি। পরে জেলা অফিস হয়ে গোরাবাজার টাউন ক্লাবে নিজের চেম্বারে গিয়ে ভোটের প্রস্তুতি। তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ সুপার নিজেকে জেলা তৃণমূলের সভাপতি মনে করছেন। ভোটের দিন পুলিশ ও তৃণমূলের সন্ত্রাস কোন পর্যায়ে যাবে, তা নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তিত।’’

ভোটের প্রচার সেরে কলকাতায় এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিলেন জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সৌমিক হোসেন। রবিবারই তিনি বহরমপুরে ফিরেছেন। হালকা চালেই বলছেন, ‘‘মানুষ যাদের সঙ্গে আছে তাদের আবার টেনশন কিসের! আমরা তো খোশমেজাজেই আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE