Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গণনার পাতেও লেজ ঝাপটাল রুই-কাতলা

ফলে বৃহস্পতিবার নদিয়া বা মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক গণনাকেন্দ্রের খাবারে মেনুতে মাংসকে পিছনে ফেলে এগিয়ে থাকল মাছের পদ। অথচ মাঝে কয়েকবছর ধরে যে কোন খাওয়া দাওয়ায়  বিরিয়ানি বিনে গীত নেই। নামীদামী দোকানের বিরিয়ানির প্যাকেট ছাড়া  সব যেন অসম্পূর্ণ থাকত। ভাগাড় কাণ্ডের জেরে এ হেন বিরিয়ানি প্রায় বাতিলের খাতায়।    

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০৩:৩১
Share: Save:

বেলা সোয়া একটা নাগাদ ভাগীরথী বিদ্যাপীঠের কাঁঠাল ছায়ায় টোটোখানা দাঁড়াতেই বেবাক বদলে গেল চারপাশের ছবিটা। গরমে ঝিমিয়ে থাকা ভিড়টা যেন টানটান হয়ে উঠল। স্কুলের পশ্চিম দিকের যে বারান্দায় সকাল থেকে দফায় দফায় চা বিলি হচ্ছিল, লাইনটা নিমেষে পড়ে গেল সেখানে।

তিনমহলা স্কুলবাড়িতে ভোটের কাজে ব্যস্ত কয়েক’শ মানুষ ততক্ষণে দূর থেকে গন্ধেই মালুম পেয়েছেন দুপুরের খাবার এসে পড়েছে। কিন্তু কুপন হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে ফিসফাস। “প্যাকেটে কি আছে কে জানে বাবা! মাংস না দিলেই হল।” সকলের উদগ্রীব নজর সামনের দিকে। প্যাকেট হাতে বারান্দা থেকে প্রথম কয়েকজন নামতেই গোটা লাইনের আকুল জিজ্ঞাসা “দাদা কি দিচ্ছে? মাংস আছে নাকি?” বোঝা গেল পঞ্চায়েত ভোট যেমনই হোক ভাগাড়ের ভূত তাড়া করে বেড়াচ্ছে মানুষকে।

ফলে বৃহস্পতিবার নদিয়া বা মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক গণনাকেন্দ্রের খাবারে মেনুতে মাংসকে পিছনে ফেলে এগিয়ে থাকল মাছের পদ। অথচ মাঝে কয়েকবছর ধরে যে কোন খাওয়া দাওয়ায় বিরিয়ানি বিনে গীত নেই। নামীদামী দোকানের বিরিয়ানির প্যাকেট ছাড়া সব যেন অসম্পূর্ণ থাকত। ভাগাড় কাণ্ডের জেরে এ হেন বিরিয়ানি প্রায় বাতিলের খাতায়।

ফলে নবদ্বীপ ব্লকের গণনাকেন্দ্র স্বরূপগঞ্জের ভাগীরথী বিদ্যাপীঠ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রায় হাজার মানুষের খাওয়ার মেনুতে ছিল সরু চালের সাদা ভাত, ডাল, আলু-পটলের ডালনা, আদা-জিরে বাঁটা দিয়ে হাল্কা করে কাতলা কালিয়া আর আমের চাটনি। রাতের জন্য টক ডাল, পাঁচ পদের তরকারি, পনিরের ডালনা আর ডিমের ঝোল। ব্লক প্রশাসন এখানে রান্নার দায়িত্ব দিয়েছিল সুকুমার দেবনাথের উপর। তিনি জানান ভোটের দিন সকালে সাড়ে চারশো জনকে খাইয়েছেন ভেজ-ডাল, আলু চিপস, মাছের ঝোল আর আমের চাটনি। রাতে এগারোশো লোকের জন্য রেঁধেছিলেন ফ্রায়েড রাইস, বেগুনি আর চিলি পনির। সুকুমার বাবু বলেন, “ভোটের দিন বা গণনার দিন অনেকেই জানতে চেয়েছেন মাংস করছি কিনা। ভাগাড় কাণ্ডের পর কেউ আর বিশ্বাস করতে পারছে না।” কৃষ্ণনগরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোটকর্মীদের মেনুতেও ঠাই হয়নি মাংসের। সাদা ভাত, ভেজ ডাল, আলু-পটলের ডালনা, মাছের কালিয়া আর আমের চাটনি। তবে রাতের মেনুতে ছিল রুটি আর চিলি চিকেন। রানাঘাট ব্লকের গণনা কেন্দ্রেও দুপুরের মেনুতে ছিল ভাত, মুসুরির ডাল, আলু পটলের তরকারি এবং দু’পিস মাছ। রাতে ফ্রায়েড রাইসের সঙ্গে মুরগির মাংস থাকলেও, সেই মাংস সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কাটানো হয়েছে বলেই কলার তুলে দাবি করলেন ক্যাটারিংয়ের লোকজন।তবে, শাহি শহর বহরমপুরে গণনাকেন্দ্রে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, বৃহস্পতিবার দুপুরে চিরাচরিত খাসির মাংস-ভাতের আয়োজন করা হয়েছে। তবে রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাটারিং সংস্থার লোকজন সামনে দাঁড়িয়ে থেকে খাসি কাটিয়ে এনেছেন বলে দাবি করলেন প্রশাসনের কর্তারা। রাতের মেনুতে ছিল ডাল, মাছের কালিয়া এবং মটর-পনির। যদিও বুধবার পুনরায় নির্বাচনের দিন জেলার বিভিন্ন ভোটগ্রহন কেন্দ্রের কর্মীসহ অন্যান্যদের জন্য মাংসের ধারকাছ দিয়ে হাঁটেননি কেউ। লালগোলার রামচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের নামু ঝাউবোনার বুথে যেমন ছিল খিচুড়ির ব্যবস্থা। তেমনি মধুপুর গ্রামে ডিমের ঝোল-ভাতেই দায় এড়িয়েছেন কর্তারা। হায় চিকেন-মটন, ভোটের বাজারে তোমারর গায়েও ছাপ্পার দুর্নাম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE