Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কার ঝোল গিয়ে পড়ে কার পাতে

যা পরিস্থিতি, তাতে ওই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে গেলে নির্দলকে নিজের ছাতার তলায় টানতেই হবে তৃণমূলকে। কৃষ্ণগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের শোনঘাটা এলাকা থেকে জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থী মানস দত্ত।

সুস্মিত হালদার  ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস
কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০১:৫৮
Share: Save:

দুই নেতার লড়াইটা ছিল নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই। দলের টিকিট দেওয়া নিয়ে সেই বিরোধ এমন পর্যায়ে যায় যে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে ভোটের লড়াইটা কার্যত শাসক দল বনাম নির্দলে দাঁড়িয়ে যায়।

ভোটের ফলপ্রকাশের পর এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাগ্য ত্রিশঙ্কু ফাঁসে ঝুলছে। তালদহ মাজদিয়া পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৮। তৃণমূল এবং বিজেপি পেয়েছে সাতটি করে, নির্দল পেয়েছে চারটি। কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েতের মোট আসন ২০। তার মধ্যে বিজেপি পেয়েছি ন’টি আসন, তৃণমূল সাতটি, কংগ্রেস আর নির্দল দু’টি করে। জয়ঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৬। তৃণমূল আর সিপিএম পেয়েছে চারটি করে, বিজেপি পেয়েছে একটি, বাকি সাতটি আসনই পেয়েছেন নির্দলেরা।

যা পরিস্থিতি, তাতে ওই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে গেলে নির্দলকে নিজের ছাতার তলায় টানতেই হবে তৃণমূলকে। কৃষ্ণগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের শোনঘাটা এলাকা থেকে জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থী মানস দত্ত। তিনি বলছেন, “কিছু ঠিক করতে পারছি না। তৃণমূলের তরফে অনেক রকম প্রস্তাব আসছে। আমরা সমস্ত নির্দল সদস্যেরা প্রণবদার সঙ্গে বসে কর্তব্য স্থির করব।”

কিন্তু প্রাক্তন ও বর্তমানের মধ্যে যা দূরত্ব তা যে সহজে মেটার নয়, তা সকলের কাছে জলের মতোই স্পষ্ট। নির্দলদের নেতা, তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি প্রণব বিশ্বাসের নেতৃত্বে নির্দলেরা একজোট হয়ে তৃণমূলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। প্রণব বলেন, “আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। মানুষ আমাদের জিতিয়েছে। আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব, কী করা উচিত।”

তৃণমূলের বর্তমান ব্লক সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোষ চৌধুরী অবশ্য দাবি করেন, “বোর্ড আমরাই গড়ব। কেউ-কেউ সিপিএম বা বিজেপির সঙ্গে চক্রান্ত করে নির্দল হয়েছে। বাকিরা কিন্তু তা নয়। আমরা তাদের সমর্থন নেব।” এই লক্ষ্যে তাঁরা কতটা সফল হন, তা সময়ই বলবে।

বহরমপুর ব্লকের সাহাজাদ গ্রাম পঞ্চায়েতও ত্রিশঙ্কু। অন্য দলের সমর্থন ছাড়া, একক ভাবে কারও পক্ষেই সেখানে বোর্ড গড়া সম্ভব নয়। মোট আসন ১৬টি। তার মধ্যে তিনটি আসনে তৃণমূল ছাড়া আর কারও প্রার্থী না থাকায় ভোট হয়নি। বাকি ১৩টি আসনে নির্বাচন হয়েছে, তাতে তৃণমূল পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছে। কংগ্রেস ও নির্দল পেয়েছে দু’টি করে আসন। বিজেপি তিনটি এবং সিপিএম একটি আসন পেয়েছে। বোর্ড গঠনের জন্য ন’টি আসনের প্রয়োজন। যে আসনগুলিতে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা হয়নি, সেগুলি যদি আদালতের রায়ে তৃণমূল পেয়েও যায় তা হলেও তাদের মোট আসন হবে আট। বিজেপি, কংগ্রেস বা সিপিএম তো ম্যাজিক সংখ্যার ধারে-কাছেই নেই। তার ফলেই ঝুলে আছে পঞ্চায়েতের ভাগ্য।

কী ভাবে কাটবে এই জট?

মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” ওই পঞ্চায়েতের দু’টি আসন কংগ্রেসের পক্ষে গিয়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “কোনও ভাবেই আমরা তৃণমূলকে সমর্থন করব না। তবে ওই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।” আর বিজেপির ঘোষিত অবস্থান হল, পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনে তারা কোনও দলকে সমর্থন করবে না। তবে তৃণমূলকে সরাতে যদি অন্য কোনও দল তাদের সমর্থন করে, তারা তা নিতে পারে।

কার ঝোল কে কোলে টানে, তা দেখার এখনও অনেক বাকি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE