পড়ল ধরা। নিজস্ব চিত্র
ধর্মঘট হোক কিংবা পথ অবরোধ, অ্যাম্বুল্যান্সের সব সময় ছাড় থাকে। কারণ, গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় দেরি হলে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে।
মঙ্গলবার বামেদের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে অফিসে পৌঁছনোর মরিয়া চেষ্টায় নিয়ম ভেঙে সেই অ্যাম্বুল্যান্সকেই বাহন করতে চেয়েছিলেন কয়েক জন অফিসযাত্রী।
কিন্তু ধর্মঘটীদের মিছিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ে যান তাঁরা। উত্তেজনা চরমে ওঠে। মার খাওয়ার হাত থেকে কোনওমতে তাঁদের বাঁচিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সকে বিক্ষুব্ধদের ভিড় থেকে বের করে আনে পুলিশ। রোগীর বদলে বেআইনি ভাবে সাধারণ যাত্রী বহন করা অ্যাম্বুল্যান্সকে কেন ছেড়ে দেওয়া হল, কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হল না চালকের বিরুদ্ধে, কেনই বা আটক করা হল না অ্যাম্বুল্যান্স—এমন অজস্র প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে। পুলিশের যুক্তি, অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি থেকে যাত্রীসমতে অ্যাম্বুল্যান্সকে বেরোনোর পথ করে না দিলে বড় গোলমাল বাঁধতে পারত। তাই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে লাল ঝান্ডা নিয়ে একটা মিছিল যাচ্ছিল কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডের দিকে। উল্টো দিক দিয়ে আসছিল অ্যাম্বুল্যান্সটি। তাকে প্রথমে যাওয়ার জায়গাও করে দেয় মিছিলের লোক জন। কিন্তু হঠাৎ তাঁদের চোখে পড়ে, অ্যাম্বুল্যআন্সের ভিতরে কোনও রোগী নেই, সেখানে বেশ কয়েক জন যাত্রী গাদাগাদি করে বসে আছে। তখনই আটকে দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্স। যাত্রীদের ঘিরে ধরে শুরু হয় বিক্ষোভ।
ক্ষুব্ধ লোক জন চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন চালকের উপরে। এরই মধ্যে একে-একে নামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। অ্যাম্বুল্যান্স ঘিরে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ছুটে আসেন কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারেরা। তাঁরা কোনও মতে সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সটি বের করে নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, অ্যাম্বুল্যান্স তেহট্টের দিক দিয়ে আসছিল। কোনও রোগী না থাকায় রাস্তায় বাসের আশায় দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জন যাত্রীকে চালক তুলে নেন। যাত্রীরাও কৃষ্ণনগর স্টেশন যাওয়ার গাড়ি পেয়ে বেঁচে যান। কিন্তু বিক্ষোভের মুখে গাড়ি আটকে যায় বাসস্ট্যান্ডের সামনে।
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। অনেকেই বলছেন, অ্যাম্বুল্যান্সে সাধারণ যাত্রী নিয়ে যাওয়া অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ কেন আইনানুগ পদক্ষপ করল না?
পুলিশের দাবি, যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল তাতে অ্যাম্বুল্যান্সটিকে নিরাপদ জায়গায় বের করে না-আনলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারত। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলছেন, “এইরকম পরিস্থিতিতে ক্ষেত্রে আমরা কোনও কেস দিতে পারি না। মোটর ভেইক্যালস অ্যাক্টে শুধু জরিমানা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে ঠিক কি হয়েছিল তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” তবে নিত্যযাত্রীদের একাংশের মতে, বিরোধীদের ডাকা ধর্মঘটের দিন কর্মস্থলে হাজির থাকার অসম্ভব চাপ থাকে। অথচ, রাস্তাঘাটে যাতায়াতে পদে-পদে সমস্যায় পড়তে হয়। মানুষ অফিসে পৌঁছনোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে বলে চোখের সামনে দুধের গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্স যা পাওয়া যায় তাতে চড়েই গন্তব্যে পৌঁছতে চায়। যাঁরা বনধ ডাকেন তাঁদেরও এটা ভাবা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy