ফুল কলাপাতায়। নিজস্ব চিত্র
সুদিন ফিরেছে তাদের! প্লাস্টিকের চাপে যারা ‘লুপ্তপ্রায়’ হতে বসেছিল। সেই আদি অকৃত্তিম কাগজের ঠোঙা, শালপাতা-পদ্মপাতা-কলাপাতা, সেই মাটির ভাঁড়। প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হতেই রবিবারের বাজারে সগর্বে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বাজারে বিকল্প হিসাবে তাদের প্রত্যাবর্তন চোখে পড়েছে।
সযত্নে পদ্মপাতায় মাছ মুড়ে দিয়েছেন দোকানি, ফুল, কচুরি থেকে শুরু করে পাঁঠার মাংস—সবই ক্রেতাকে দেওয়া হয়েছে শালপাতায় মুড়ে। কাগজের ঠোঙায় দেওয়া হয়েছে কাঁচা লঙ্কা, আদা, রসুন, ডিম। তবে কোনও কোনও ব্যবসায়ী লুকিয়ে এ দিনও প্লাস্টিক ব্যবহার করেছেন। কেন এমন করছেন জিজ্ঞাসা করায় উত্তর মিলেছে, “ক্রেতার চাপ। না বলতে পারিনি। দু’-এক দিনে ওঁরা অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।” এ দিন অনেক ক্রেতারই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গিয়েছে, যখন বাজারের থলে নিয়ে বাজার করতে যাওয়া ছিল দস্তুর। অনেকে সঙ্গে কাচের বোতলও রাখতেন, তেল কিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
সুদিন ফিরতে শুরু করেছে আরও অনেকেরই। যেমন শুকদেব চৌধুরী। দীর্ঘ দিন ধরে পাত্রবাজারে পাইকারি হারে কাগজের ঠোঙা বিক্রি করে আসছেন। দিনে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি ঠোঙা বিক্রি করতেন। কিন্তু গত দু’দিন সেটা বেড়ে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ কেজি হয়েছে। ঠোঙা প্রস্তুতকারী বিল্টু অধিকারীকে বেশি ঠোঙার ‘অর্ডার’ দিচ্ছেন। কিন্তু বিল্টুবাবু নারাজ। তিনি বলছেন, “উনি ১৫ দিনে ৮০ থেকে ৮৫ কেজি ঠোঙা করতে বলছেন। সেটা পারব না।” শুকদেববাবু বলছেন, “কী সমস্যা বলুন তো! হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। এখন দেখছি পুরনো পরিবারগুলোর সঙ্গে আবার যোগাযোগ করতে হবে।”
প্রায় একই অবস্থা শালপাতার ব্যবসায়ীদেরও। হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাঁরাও শকিলে পড়েছেন। তাঁরা এরই মধ্যে কলকাতার মহাজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যাতে দু-এক দিনের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ শালপাতার যোগান দেওয়া যায়। শালপাতায় মুরগির মাংস রাখতে রাখতে রেবা খাতুন বলছেন, “বিষয়টা কিন্তু খারাপ না। প্রথম দু’দিন খরিদ্দারেরা একটু অসন্তুষ্ট হলেও এখন দেখছি তাঁরাও কিছু বলছেন না।” মটির পাত্ররও চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক সৌমেন দত্ত বলছেন, “বিকল্প নিয়ে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য আমরা আগেই খোঁজখবর নিয়েছি। সমস্যা হবে না। এখন শুধু প্রয়োজন নাগরিকদের সহযোগিতা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy