Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিস্ফোরণে উড়ে গেল বাড়ি, মৃত ১

ফরিদপুরের রৌশন শেখের বাজি কারখানার নাম ডাক যথেষ্ট। পুজো-পরবের আগে তার দোকান থেকে আতস কিংবা শব্দ বাজি আশপাশের শহর ছাড়িয়ে কলকাতাতেও পাড়ি দেয়।

বাজি-পোড়া: বিস্ফোরণের পর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জখম এক ব্যক্তিকে। বুদবার রেজিনগরে। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।

বাজি-পোড়া: বিস্ফোরণের পর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জখম এক ব্যক্তিকে। বুদবার রেজিনগরে। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রেজিনগর শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫১
Share: Save:

বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ এবং তার জেরে মৃত্যু এক বাজি-শ্রমিকের। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও অন্তত তিন জন। তবে, ঘটনার পর থেকেই মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের কাছে ফরিদপুরের ওই বাজি কারখানার মালিক রৌশন শেখের কোনও খোঁজ মেলেনি। পুলিশের ধারণা, বিস্ফোরণে কয়েক জনের প্রাণহানি হতে পারে, তাদের দেহ দ্রুত লুকিয়ে ফেলা হয়েছে।

ফরিদপুরের রৌশন শেখের বাজি কারখানার নাম ডাক যথেষ্ট। পুজো-পরবের আগে তার দোকান থেকে আতস কিংবা শব্দ বাজি আশপাশের শহর ছাড়িয়ে কলকাতাতেও পাড়ি দেয়। বিয়ে-শাদির মরসুমেও বাজির কদর বেশ। তাই বছরভর তার ব্যস্ততা। আশপাশের গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের বরাতও জুটত ঢের। তবে, তা বোমা তৈরির বলেই গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন।

তা হলে কি পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে তারই প্রস্তুতি চলছিল ওই কারখানায়? পুলিশ তারই উত্তর হাতড়াচ্ছে। রেজিনগর থানার অফিসার-ইন চার্জ সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘শুধু বাজির জন্য এত বড় বিস্ফোরণ কিনা এখনই বলা সম্ভব নয়।’’ বুধবার সকাল ন’টা নাগাদ আচমকা তীব্র বিস্ফোরণ। গ্রামবাসীরা ছুটে গিয়েও ধোঁয়ার ঘেরাটোপ ডিঙিয়ে রৌশনের বাড়ি ঢুকতে সাহস করছিলেন না। পুলিশ এসে শুরু করে তল্লাশি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য নিয়ে ভিজে কাঁথায় জল ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু হয়। খোঁজুখোঁজির পরে বাড়ির লাগোয়া ধান খেত থেকে মেলে রৌশনের ছেলে সতেরো বছরের রাহুল শেখের ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ। দগ্ধ অবস্থায় ছটফট করতে থাকা রৌশনের স্ত্রী আলিয়া বিবি (২৫) ও জাকির শেখকে (২৬) ভর্তি করানে হয় স্থানীয় হাসপাতালে। পরে তাদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ওই এলাকায় লালু শেখের নামে বাজি তৈরির লাইসেন্স রয়েছে। ১৯৯৯ সাল থেকেই তার কারখানার রমরমা। রৌশন লালুরও জ্ঞাতি। স্থানীয় প্রশশান সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা পরিবারটির আয় বাজি তৈরি থেকেই। গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে তার পরিবারের লোকেরা সবাই মিলে বাজি তৈরি করত।

এ দিন ঘটনার পরে দমকলের কর্মীরা এসে পরীক্ষা করে দেখেন। তাঁদের অনুমান, বাজির মশলায় বিড়ির আগুন থেকেই এই বিপত্তি।

কোনও বাজি-শ্রমিক ঘরের বাইরে এসে বিড়ি ধরাতে যায়। তার পায়ের সঙ্গে পাটের সরু দড়ি জড়িয়ে ছিল। সেই দড়িতে বাজির মশলা লেগেছিল। সেখান থেকেই ঘরে আগুন ধরে যায়। তার জেরেই বিস্ফোরণ। রৌশনের প্রতিবেশি রহিম শেখ বলেন, ‘‘শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। দেখি রৌশনের বাড়ি জ্বলছে।’’ তবে পুলিশ যতই বাজির লাইসেন্সের কথা বলুক কিছু প্রশ্ন থেকই গিয়েছে।

স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি পঞ্চায়েত নিবাচর্নের আগে তৃণমূলের লোকজন সরাসরি ওখানে বোমা বানানোর বরাত দিয়েছিল। রৌশন এই কাজের বরাত পেয়েছিল। তবে, তৃণমূলের জেলা সম্পাদক রেজিনগরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি জানি ওটা লাইসেন্স প্রাপ্ত বাজির কারখানা। তবে এই দুর্ঘাটনা কেন ঘটলো তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোন সম্পর্ক নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rejinagar Blast রেজিনগর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE