Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দশ টাকার জন্য বোমাবাজি, তপ্ত বিন্দারপুরে জখম মহিলা

মাত্র দশ টাকা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই গ্রামের দুই গোষ্ঠীর ঝামেলা চলছিল। মঙ্গলবার সেই ঝামেলা শেষ হল বোমাবাজিতে। দিনভর এই বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়ে থাকল ভরতরপুরের বিন্দারপুর গ্রাম।

বোমাবাজির পরে। নিজস্ব চিত্র।

বোমাবাজির পরে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৪
Share: Save:

মাত্র দশ টাকা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই গ্রামের দুই গোষ্ঠীর ঝামেলা চলছিল। মঙ্গলবার সেই ঝামেলা শেষ হল বোমাবাজিতে। দিনভর এই বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়ে থাকল ভরতরপুরের বিন্দারপুর গ্রাম।

ঘটানর সূত্রপাত দিন দশেক আগে। গ্রামে ঢোকার মুখের মাঠে দু’দল কিশোর নিজেদের মধ্যে একটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলে। স্থির হয়, জয়ী দলকে ১০ টাকা দেওয়া হবে। যারা হারবে তারাই ওই টাকা দেবে। ওই শর্তে বিন্দারপুর গ্রামের দুই তৃণমূল সমর্থকের ছেলে ওই খেলায় দু’দলের নেতৃত্ব দেয়। একটি দলের অধিনায়ক ছিলেন আলেম শেখের ছেলে বাহাদুর। আর অন্য দলটির নেতৃত্বে ছিল তাহের আলির ছেলে সাবের আলি। বাহাদুর শেখের দল নির্ধারত ছয় ওভারে পাঁচ উইকেটে ১০০ রান করে। পরে ব্যাট করতে নেমে সাবের আলির দল নির্ধারিত ওভার শেষে ৯০ রান করে। তারা দশ রানে হারে। অভিযোগ, খেলা শেষে শর্ত ভঙ্গ করে সাবের আলিরা। তারা বাহাদুর শেখের দলকে দশ টাকা দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। পরে ওই বচসাতে জড়িয়ে পড়ে বাড়ির বড়রা।

টানা দশদিন ধরে ওই আশান্তি চলছিলই। এ দিন সকালে তা বোমাবাজির চেহারা নেয়। সাবের আলির বাবা তাহের আলি ও তার দুই ভাই— মেহের আলি ও সায়ের আলি নিজের অনুগামীদের নিয়ে বাহাদুর শেখের বাবা আলম শেখের বাড়িতে চড়াও হয়। অভিযোগ, চড়াও হয়ে তারা কেন টাকা দেওয়া হয়নি, এই কৈফিয়ত তলব করে বোমাবাজি শুরু করে। অভিযোগ, খানিক পরে আলম শেখও তার অনুগামীদের জুটিয়ে পাল্টা বোমাবাজি শুরু করে। টানা দেড়ঘন্টা ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজি চলে। গোটা গ্রাম কেঁপে ওঠে বোমার শব্দে।

পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে গ্রামে যায় পুলিশের একটি জিপ। পুলিশকে দেখে প্রথমে দুই পক্ষই এতটুকুও ঘাবড়ে না গিয়ে বোমাবাজি চালাতে থাকে। অভিযোগ, পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করেও ছোড়া হয় বোমা। যদিও ওই বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পাশের একটি তালগাছে লাগে।

এ দিকে ওই বোমাবাজিতে আলম শেখের তুতো বোন সানোয়ারা বিবি বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন। ঘটনার পর দুই পরিবারে‌রই পুরুষেরা গ্রামছাড়া। ওই মহিলা বিনা চিকিৎসাতেই দীর্ঘক্ষণ ধরে বাড়িতেই পড়ে ছিলেন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। বোমাবাজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামেরই এক মুদি ব্যবসায়ীর বাড়ি ও দোকান। দোতলা ওই বাড়ির জানলার কাচ বোমার আঘাতে ভেঙে যায়। ওই ব্যবসায়ী মশাই শেখ বলেন, “বোমার শব্দ শুনেই দোকান বন্ধের তোড়জোড় শুরু করি। আচমকা কয়েকজন এসে আমার বাড়ি ও দোকান লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে।’’ গ্রামের আর এক মহিলা দেলজাহান বিবি জানান। তাঁর স্বামী কাজের সূত্রে পশ্চিম এশিয়ায় থাকেন। তাঁরা ওই পরিবারের ঝামেলার মধ্যে মোটেও নেই। তা সত্ত্বেও তাঁদের বাড়িতে বোমা ছোড়া হল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ওই দুই পরিবার এক সময় সিপিএম করত। কিন্তু রাজ্যে পরিবর্তনের পর তৃণমূলে নাম লেখায়। কিন্তু দুই পরিবার গ্রামের বিবাদমান দুই নেতার দ্বারা পরিচালিত হয়। ওই দুই নেতার অনুগামীরা এলাকার জমি দখলের জন্য মাঝেমধ্যেই মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এ দিন আসলে রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখানোর জন্যই ওই দুই পরিবার বোমাবাজিতে জড়িয়ে পড়ল। এমনটাই জানাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। ভরতপুর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আবদুল বারি বলেন, “সামান্য ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী বোমাবাজির ঘটনাতেই প্রমান হল, তৃণমূল এলাকায় শান্তি চায় না।’’ আর ভরতপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নূর আলম বলেন, “ভরতপুরে তৃণমূলের কোন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সম্পতি নিয়ে বিবাদের জেরে ওই বোমাবাজি হয়েছে।’’ কান্দির এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন, “ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বচসার জেরে ওই দুই পরিবারের মধ্যে বোমাবাজি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ঘটনায় তদন্ত চলছে। গ্রামে পুলিশ টহল দিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bomb blast kandi injury woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE