Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভাই-বোনের মাদ্রাসার নম্বরও হুবহু এক

আত্মীয়স্বজন থেকে পাড়ার লোক সকলেই তাদের বলতেন ‘হরিহরআত্মা।’ তা বলে পাঁচ বছরের ব্যবধানে দু’জনের মাধ্যমিকের ফলও এক হবে, এতটা ভাবতে পারেননি কেউ।

বোন কিসমা জুমানার সঙ্গে রেজওয়ানুর। নিজস্ব চিত্র

বোন কিসমা জুমানার সঙ্গে রেজওয়ানুর। নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০১:৪৩
Share: Save:

ছোটবেলা থেকেই মেয়ে দাদা-ভক্ত, আর বোন-অন্ত প্রাণ দাদাও। পাঁচ বছরের ছোটবড় দুই ভাইবোন। এক জনকে ছাড়া অন্য জনের জগৎ অন্ধকার। আত্মীয়স্বজন থেকে পাড়ার লোক সকলেই তাদের বলতেন ‘হরিহরআত্মা।’ তা বলে পাঁচ বছরের ব্যবধানে দু’জনের মাধ্যমিকের ফলও এক হবে, এতটা ভাবতে পারেননি কেউ। ২০১৩ সালে দাদা রেজওয়ানুর ৭২৭ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছিল এ বারের মাধ্যমিকে সেই ৭২৭ নম্বরই পেয়েছে বোন কিসমা জুমানা! যা দেখে হতবাক পরিবারের লোকজন, প্রতিবেশী থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা—একবাক্যে সকলেই বলছেন, ‘‘একেই বলে প্রাণের মিল।’

নদিয়ার থানারপাড়া থানার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক আব্দুল হকের দুই সন্তান ছেলে রেজওয়ানুর হক মণ্ডল ও মেয়ে কিসমা জুমানা। দাদা-র কথা অক্ষরে-অক্ষরে মেনে চলত বোন। দাদা ছাড়া খাওয়া, ঘুমোনো, পড়া, খেলা, বেড়ানো কিছুই হত না তার। দাদার আচারআচরণ অনুসরণ করত। দাদা পড়তে বসলেই তার পাশে বই নিয়ে পড়তে বসে যেত ছোট্ট বোন। মাধ্যমিকের ফলেও যেন দাদাকে হুবহু অনুসরণ করেছে বোন।

বাড়ির লোকেই জানিয়েছেন, স্থানীয় থানারপাড়া হাজি মুসলিম হাই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে ভাইবোন। বাবা আব্দুল হকের কথায়, “দু’জনেরই পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক রয়েছে। কাউকেই কখনও পড়ার জন্য বলতে হয়নি। ছেলে পড়তে বসলেই মেয়ে পড়তে বসে যেত। ছেলে অঙ্ক করলে মেয়েও স্লেট-পেন্সিল নিয়ে অঙ্ক কষা শুরু করত। আমি ওদের পড়াশোনার দিকে তেমন নজর দিতে পারতাম না। সবটাই দেখত আমার স্ত্রী রেহেনা বেগম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘২০১৩ সালে ছেলে ৭২৭ নম্বর নিয়ে রাজ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল। এ বার সেই একই নম্বর পেয়ে মেয়ে জেলায় সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে।’’

রেজওয়ানুর এখন কলকাতায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজি পড়ছে। প্রিয় দাদার মতো নম্বর পেয়ে খুশি কিসমাও। তার কথায়, “দাদাই আমার অনুপ্রেরণা। দাদা-র মাধ্যমিকের সময় আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তাম। তখন থেকেই মনে হত , ওর মতো ভাল ফল করতে হবে। কিন্তু একেবারে এক নম্বর হবে ভাবিনি। আমার প্রিয় বিষয় জীবনবিজ্ঞান। ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা রয়েছে।”

টেস্ট পর্যন্ত কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না কিসমা-র। তার পরে তিন জন শিক্ষক বিনা পারিশ্রমিকে পড়া দেখিয়ে দিয়েছিলেন। মা রেহেনা বেগম জানান, ছেলেমেয়ে কাউকেই পড়ার জন্য জোর করতে হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ে দিনের বেলায় সে ভাবে পড়ত না। রাত জেগে পড়ত। তাই আমাকেও রাত জাগতে হত।’’ ভবিষ্যতে ছেলেমেয়ে যেখানেই থাকুক তাদের এই ভালবাসা যেন অটুট থাকে, সেটাই চান অভিভাবকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

High Madrasa Results Marks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE