শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
বেশ কয়েক বছর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। এ বারে কর্তৃপক্ষকে বলে অনেক আগে থেকে ছুটির ব্যবস্থা করেছিলেন গ্রামের কালীপুজোয় আসবেন বলে। গত শুক্রবার বিকেলে ছেলে প্রীতমকে ফোন করে বার বার বলেছিলেন ২৬ অক্টোবরের প্লেনের টিকিট কাটার জন্য। কিন্তু ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে গেল বিএসএফ জওয়ান পরিতোষ মণ্ডলের।
জম্মু-কাশ্মীরে কর্মরত ছিলেন। শুক্রবারের পর থেকে তাঁর সঙ্গে আর ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি বাড়ির লোক। শনিবার সন্ধ্যায় কর্মস্থল থেকেই ফোন আসে নদিয়ার পলাশিপাড়ার রুদ্রনগর গ্রামে, পরিতোষবাবুর বাড়িতে। জানানো হয়, আরএস পুরা জেলার আর্নিয়া সেক্টরে তিনি ডিউটিতে ছিলেন। সেখানে শনিবার সন্ধ্যা থেকে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! তল্লাশি চলছে। জঙ্গিরা অপহরণ করতে পারে, এই আশঙ্কায় বাড়ির লোক কাঁটা হয়ে যায়।
এই ভাবে কাটে দু’দিন। মঙ্গলবার দুপুরে ফের ফোন আসে এবং তাঁর ভাই প্রতাপ মণ্ডলকে জানানো হয়, ডিউটিরত অবস্থায় কোনও ভাবে হরকা বানে পাহাড়ি নালায় পড়ে যান বছর আটান্নোর পরিতোষ। স্রোতের টানে তাঁর দেহ সীমান্ত পার করে চলে যায় পাকিস্তানে। সেখানে দেহ উদ্ধারের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং করে দেহ শনাক্ত করার পর তা ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর বাড়ি নিয়ে আসা হবে।
মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামে। তাঁর বাড়ি ভিড় করেন প্রতিবেশীরা। কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন স্ত্রী জয়ন্তী। শুধু ডুকরে উঠছিলেন কান্নায়। কান্নার দমকে কথা বলতে পারছিলেন না মেয়ে প্রিয়াও। থম মেরে বসেছিলেন পলিটেকনিকের ছাত্র ছেলে প্রীতম। তাঁদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলছিলেন প্রতিবেশীরাও। তাঁরাই জানালেন, গ্রামে সকলের প্রিয় ছিলেন পরিতোষ। বছরখানেক আগে ছুটিতে বাড়ি ফিরে গ্রামের একটি রাস্তা সবাইকে নিয়ে ঠিক করেছিলেন। গ্রাম পরিচ্ছন্ন রাখার কথাও জনে-জনে বলেছেন।
পরিতোষবাবুর কাকা নিরঞ্জন মন্ডল জানান, ১৯৮৫ সালে তাঁর ভাইপো সেনাবাহিনীর চাকরি পান। বাড়ির সকলে তাতে গর্বিত হয়েছিলেন। তাঁর শ্যালক মুকেশ মণ্ডল এবং ভগ্নিপতি সমর জোয়াদ্দার-ও সেনাবাহিনীতে কর্মরত এবং তাঁদের পোস্টিংও জম্মু-কাশ্মীরে। পরিতোষকে খুঁজতে তাঁরাও চেষ্টার কসুর করেননি। পরিবারের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, এক বছরের মধ্যেই চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা ছিল পরিতোষের। কিন্তু তার আগে তাঁর জীবনটাই শেষ হয়ে গেল। এটা নিছক দুর্ঘটনা নাকি কেউ কোনও শত্রুতার জেরে তাঁকে ঠেলে জলে ফেলে দিয়েছে, সেই প্রশ্ন এখন বার-বার প্রিয়জনদের মনে উঠছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy