প্রতীকী ছবি
গবেষণার জন্য যাতে কলকাতায় ছুটতে না-হয় তার জন্য কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরিতে তৈরি হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক ও গবেষণা সহায়তা কেন্দ্র। যার বাজেট ধরা হয়েছে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। যার পুরোটাই দিচ্ছে একদা কৃষ্ণনাগরিক প্রবাসী এক পরিবার।
গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ ও ওই প্রবাসী পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ জুলাই কাজ শুরু হয়েছে। গ্রন্থাগারের ছাদে ৮৬০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে তৈরি হচ্ছে ওই গবেষণা কেন্দ্র। তবে গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির কেউ টাকা হাতে নেননি। সকল পরিকাঠামো তৈরি করে পরিচালন সমিতিকে হস্তান্তর করবে প্রবাসী ওই পরিবার। গবেষেণা সহায়তা কেন্দ্রের জন্য কেনা হবে প্রায় ছয় হাজার বই। বইয়ের তালিকায় থাকছে ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি, পরিবেশবিদ্যা, লিঙ্গ, জাতি, সংবিধান, আইন, শিল্প, সঙ্গীত, চিত্রকলা ও গ্রন্থাগারবিদ্যা। পাশাপাশি থাকছে মহিলাদের উপরে নানা ধরনের বই। আমেরিকা, কানাডা ও ব্রিটেন থেকে বেশির ভাগ বই কিনে পাঠানো হবে।
এর পাশাপাশি রাখা হচ্ছে ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন, কফি মেকারও। উদ্দেশ্য, যাঁরা এই গবেষণাগারে আসবেন তাঁরা ফ্রিজে খাবার রাখতে পারবেন। প্রয়োজন মতো মাইক্রোওভেনে গরম করে নিতে পারবেন, কফি মেকারে কফি বানিয়ে নিতে পারবেন। থাকবে ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা। প্রতিটি টেবিলে যাতে পাঠক ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পরেন তার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে।
যে পরিবার খরচ বহন করছে সেই পরিবারের সদস্য হলেন কাঞ্চন সরকার। কৃষ্ণনগরের এভি স্কুলের কাছে তাঁদের বাড়ি। বাবা শ্যামরঞ্জন সরকার ছিলেন কাঠ ব্যবসায়ী। কাঞ্চন এখন থাকেন কানাডার কেলোনাতে। সেখানকার ইউনিভারসিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে সোশিয়োলজি বিভাগে পড়ান। তাঁর বোন সঞ্চিতা থাকেন আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড শহরে। সেখানকার ক্লিভল্যান্ড স্টেট ইউনিভারসিটিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ান। তাঁদের পিসি চিকিৎসক অঞ্জলি সরকার থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ার সানদিয়াগো শহরে। সেখানে তিনি একজন কার্ডিয়োলজিস্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এখন বয়স প্রায় আশি বছর। বছর খানেক আগে সঞ্চিতাদেবীর বাড়িতে সকলে জড়ো হয়েছিলেন। সেখানেই অঞ্জলিদেবী জানান, জন্মস্থানের মানুষের জন্য কিছু একটা করতে চান। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় যে, জেলার মানুষের জন্য তৈরি করা হবে এমন একটি গবেষণা সহায়তা কেন্দ্র যেখানে শুধু পঠ্যপুস্তকই নয়, থাকবে প্রচুর সংখ্যক দেশ বিদেশের ‘রেফারেন্স’ বই। যাতে গবেষণা করতে ইচ্ছুক এমন কাউকে বইয়ের জন্য কলকাতায় না ছুটতে হয়। বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে উদ্বোধন করা হবে সেই গবেষণা সহায়তা কেন্দ্র। কাঞ্চনের ঠাকুরমার নামে এই গবেষণা সহায়তা কেন্দ্রের নাম রাখা হয়েছে ‘নরেশনন্দিনী সরকার পাঠ্যপুস্তক ও গবেষণা সহায়তা কেন্দ্র’।
কাঞ্চন বলছেন, “আজ চারদিকে বিশেষ করে সমাজমাধ্যমে ভুয়ো-মিথ্যে তথ্যে ছড়াছড়ি। এই কঠিন সময়েও যদি কেউ প্রকৃত তথ্য জানতে চান তা-হলে যেন হাতের কাছে সকল ধরনের রেফারেন্স বই পেয়ে যান সেই জন্য এই প্রচেষ্টা।”
কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির পরিচালন সমিতির যুগ্ম সম্পাদক স্বদেশ রায় বলছেন, “আজকের দিনে এটা একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। সব চাইতে ভাল লাগছে যে, এতগুলো টাকা পরিবারের সদস্যেরা সামাজিক কাজে ব্যয় করার মতো মানসিকতা দেখালেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy