শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে জখম বিশ্বজিৎ। নিজস্ব চিত্র
সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে ‘তোলা’ দিতে রাজি না হওয়ায় এক বালির কারবারির শ্যালককে থানায় নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল ধুবুলিয়া থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। দু’দিন শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বিশ্বজিৎ ঘোষ নামে ওই যুবক। বুধবার তিনি ছুটি পাওয়ার পরেই পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধুবুলিয়ার সোনডাঙার দীপক ঘোষ বালির ব্যবসা করেন। রবিবার সকালে তাঁর একটি বালি বোঝাই গাড়ি বর্ধমানের কাটোয়া থেকে মায়াপুরে যাচ্ছিল। তাঁদের অভিযোগ, সোনঘাটার পাণ্ডবতলায় লরি দাঁড় করিয়ে কৌশিক ঠাকুর নামে এক সিভিক ভল্যান্টিয়ার মোটা টাকা দাবি করেন। চালক তা দিতে অস্বীকার করলে ওই সিভিক কর্মী মারমুখী হয়ে ওঠেন। চালকের ফোন পেয়ে দীপক সেখানে গেলে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়।
পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগে দীপক জানিয়েছেন, তাঁর কলার ধরে টানাটানি শুরু করেছিলেন সিভিক ভল্যান্টিয়ার। তার মধ্যেই ধুবুলিয়া থানায় ফোনও করেন ওই কর্মী। কোনও রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে মোটরবাইক ফেলে দীপক পালান। তাঁর কথায়, “ওরা এ ভাবেই রোজ তোলা তোলে। কিন্তু আমার সব আইনি কাগজ আছে। তবে কেন আমি টাকা দেব পুলিশকে?”
দীপকের অভিযোগ, পরে তাঁর শ্যালক বিশ্বজিৎ বাইক নিতে গেলে তাঁকেই পাকড়াও করেন সেই সিভিক ভল্যান্টিয়ার। ধুবুলিয়া থানার পুলিশ এসে বিশ্বজিৎকে থানায় নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে। বিশ্বজিতের অভিযোগ, “আমায় একটা ঘরে ঢুকিয়ে মাটিতে ফেলে দু’জন বুট দিয়ে লাথি মারতে থাকে। কাকুতি-মিনতি করেও ছাড়া পাইনি। পরে আমায় লকআপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সারা গায়ে যন্ত্রণা হতে থাকায় সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওরা যন্ত্রণার ওষুধ এনে দেয়।’’
পরিবারের লোকজন বিশ্বজিৎকে ছাড়াতে থানায় গিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, দীপককে এনে দিলে তবে বিশ্বজিৎকে ছাড়া হবে বলে পুলিশ জানিয়ে দেয়। অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাতে ধুবুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বিশ্বজিৎকে দেখিয়ে আনা হয়। তাঁর কথায়, “হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসার পরে ওরা আর আমাকে লকআপে ঢোকায়নি। বাইরেই বিছানা করে দিয়েছিল।”
সোমবার সকালে বাড়ির লোকেরা গিয়ে বিশ্বজিৎকে নিয়ে আসেন। অসুস্থ বোধ করতে থাকায় তাঁকে ফের ধুবুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ‘রেফার’ করা হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। বুধবার সকাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই ভর্তি ছিলেন। বিশ্বজিৎ বলেন, “এখনও আমার সমস্ত শরীরে কালশিটে।”
বিশ্বজিৎ হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পরে পরিবারের লোকজন একটি মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের মাধ্যমেই পুলিশ সুপার সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ জানান তারা। মানবাধিকার কর্মী কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, “এই ঘটনায় যদি কারও শাস্তি না হয়, আমরা সর্বোচ্চ স্তরে যাব।” জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। এমন কিছু ঘটে থাকলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy