Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নেশাগ্রস্তকে একঘরে করার নিদান

সমাধানের আশায় অনেকেই ছুটে আসেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বা সদস্যদের কাছে। কিন্তু অনেক বুঝিয়েও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুপথে ফেরানো যায় না। তাঁরা থেকে যান একই অবস্থানে। কয়েক দিন হয়তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন কিন্তু বেশিরভাগই বেশিদিন মন শক্ত করে নেশাকে দূরে রাখতে পারেন না।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার 
চাপড়া শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০৬:১৯
Share: Save:

বাড়ির একমাত্র আয়ক্ষম মানুষটি মদের নেশায় চুর হয়ে আছে। যা আয় করেন তা-ই শেষ হয়ে যাচ্ছে নেশার পিছনে। যুবক এমনকি কিশোরদের অনেকে গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, কোরেক্স এর নেশায় আক্রান্ত। যা নিয়ে বহু পরিবার নিত্য অশান্তি, দুশ্চিন্তা, নিরাপত্তাহীনতা।

সমাধানের আশায় অনেকেই ছুটে আসেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বা সদস্যদের কাছে। কিন্তু অনেক বুঝিয়েও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুপথে ফেরানো যায় না। তাঁরা থেকে যান একই অবস্থানে। কয়েক দিন হয়তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন কিন্তু বেশিরভাগই বেশিদিন মন শক্ত করে নেশাকে দূরে রাখতে পারেন না। ফলে অনেক সংসার ভেসে যায়। শেষ পর্যন্ত গোটা বিষয়টাকে কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছে চাপড়া -২ গ্রাম পঞ্চায়েত। প্রকাশ্যে দিনে নিষেধাজ্ঞা না মানলে অথবা রাতে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় মদ্যপান, হেরোইন, গাঁজা, চরস, ফেনসিডিলের মতো বিভিন্ন নেশা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা।

এলাকার মসজিদ কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কেউ সেই নির্দেশ না-মানলে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কেউ বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করবে না। সেই পরিবারে কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির জানাজায় কেউ নমাজ পড়বেন না বা গোরস্থানে মাটিও দেওয়া হবে না। কোনও ইমাম যদি তার পরও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির ধর্মীয় কাজে অংশ নেন তা হলে মসজিদ কমিটি তাঁর বিরুদ্ধেও উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে। পঞ্চায়েতের তরফে এই মর্মে নোটিসও দেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের আসমাতারা বিবি বলছেন, “প্রতিদিন নানা সমস্যা নিয়ে আমার কাছে মানুষ আসেন। তার মধ্যে প্রধান সমস্যা হল নেশার কারণে পারিবারিক অশান্তি।” তিনি বলছেন, “শুধু মাত্র নেশার কারণে পরিবারগুলি শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই এই কড়া অবস্থান নেওয়া হয়েছে।” চাপড়া বড় আন্দুলিয়া বড় মসজিদ কমিটির পরিচালন সমিতির সম্পাদক এতিম মোল্লা বলছেন, “একটা কড়া অবস্থান নিতেই হত। কারণ, বহু পরিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা নেশাগ্রস্তদের চাপ দিয়ে নেশা ছাড়াতে চাইছি।”

চাপড়ার মানুষের একাংশ আবার অভিযোগ করেছেন, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার আগে এলাকায় নেশার দ্রব্য ঢোকা বন্ধ করতে হবে। পুলিশ সেই দায়িত্ব পালন করছে না। আসমাতারা বিবি বলছেন, “পুলিশ তার মতো চেষ্টা করছে। আমরাও তার সঙ্গে আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি।” আর জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলছেন, “শুধু চাপড়া নয়, জেলার সর্বত্র পুলিশ মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। প্রচুর মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি বিক্রেতাদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drug Addiction Chapra Panchayat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE