Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নাবালিকা, সঙ্গে দোসর অ্যানিমিয়া

বাড়িতে প্রসব ও কম বয়সে বিয়ের হিড়িক তো রয়েছেই, তার মধ্যেই সুতিতে প্রসবকালীন বিপদের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশ গর্ভবতী মা অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায়। 

বিমান হাজরা
আহিরণ শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪১
Share: Save:

বাড়িতে প্রসব ও কম বয়সে বিয়ের হিড়িক তো রয়েছেই, তার মধ্যেই সুতিতে প্রসবকালীন বিপদের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশ গর্ভবতী মা অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায়।

এই অবস্থায় সুতিতে তাই গর্ভবতী মায়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করতে বিভিন্ন গ্রামে ৭ জন করে নজরদারি টিম গড়ল স্বাস্থ্য দফতর ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আশা, এএনএম, আইসিডিএস কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কর্মীরা ছাড়াও কমিটিতে রয়েছে গর্ভবতী মায়েদের পরিবারের লোকজনও।

গত সপ্তাহে আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১০০ জন গর্ভবতী মা ও প্রসূতি, তার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ করা হয় সম্প্রতি। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার বলেন, “প্রসূতিদের অপুষ্টিজনিত যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা উদ্বেগের। সুতিতে অন্তত ৬০ শতাংশ গর্ভবতী মা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন। অথচ একটু চেষ্টা করলেই ছবিটা বদলানো যায়। ”

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জেলা কো অর্ডিনেটর শ্রীময়ী ভট্টাচার্য জানান, গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে যা যা পালনীয় সুতিতে তা করা হচ্ছে না। এমনকি পরিবারের লোকজনও উদাসীন।

শ্রীময়ী জানান, ৬ মাস ধরে আয়রণ ও ক্যালসিয়াম ওষুধ খাওয়া, গর্ভকালীন অবস্থায় অন্তত ৪ বার চিকিৎসককে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আইসিডিএস কেন্দ্র থেকে গর্ভবতী মায়ের জন্য বরাদ্দ পুষ্টিকর খাবার তাকে খাওয়ানো, যাতে গর্ভবতী মায়ের ওজন ১০ থেকে ১২ কেজি বাড়ে। গর্ভবতী মায়ের হিমোগ্লোবিন কমপক্ষে ১১ গ্রাম এবং রক্ত চাপ ১৪০/ ৯০ থাকা জরুরি। তার জন্য দরকার দুপুরে ২ ঘন্টা ও রাতে ৮ ঘন্টার বিশ্রাম। শ্রীময়ী বলেন, “আমরা প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি প্রায় বেশির ভাগই প্রসূতি এটা মেনে চলেন না। এমনকি পরিবারের লোকজনও সে ভাবে তাদের প্রতি যত্নবান নন। যার ফলে গর্ভবতী মায়েরা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন। আইসিডিএসের খাবার মায়েরা সেই কেন্দ্রে বসে না খেয়ে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজে না খেয়ে ছেলে মেয়েকে খাওয়াচ্ছেন। বাড়িতে কাজের চাপ দেখিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না নিয়মিত পরীক্ষার জন্য। আলট্রা সোনোগ্রাফিও করাচ্ছেন না।”

সুতির হারোয়া গ্রামের গর্ভবতী মা খাইরুন্নেসা বিবি। ৩৮ বছরের খাইরুন্নেসার ৫ সন্তান জীবিত। অতীতে তার ১ সন্তানের মৃত্যুই শুধু নয়, রয়েছে গর্ভপাতের ঘটনাও। তার সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স ১৭ মাস, যার প্রসব হয়েছে বাড়িতেই। এখন গর্ভবতী, একটি মাত্র টিটেনাস নিয়েছেন তিনি। না গিয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে, না গিয়েছেন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এমন অজস্র খইরুন্নেসা ছড়িয়ে রয়েছে এলাকায়। তাঁদের দিন বদলের চেষ্টাতেই এমন কর্মকাণ্ড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gender Health Child Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE