Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ঝরা বটপাতা কুড়িয়ে এনে অঙ্ক শিখছে খুদেরা

অভিভাবকদের কপালে কুঞ্চন আর শিক্ষকদের পণ্ডশ্রমের বাইরে পড়ে থাকে নিশ্চুপ হা হুতাশ।

পাতায়-পাতায় অঙ্ক: নিজস্ব চিত্র

পাতায়-পাতায় অঙ্ক: নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০২:০০
Share: Save:

পড়ায় বড় অমনোযোগ। স্কুলে এক রাশ ধুলো মেখে খাতা-বই ছিঁড়ে ঘরে ফেরা আর কুপির আলোয় গৃহশিক্ষকের ধমকের বাইরে ফেল-হীন স্কুলে টুকটুক করে ক্লাসে হয়ত উঠে যায় তারা, কিন্তু শেখে না কিছুই।

অভিভাবকদের কপালে কুঞ্চন আর শিক্ষকদের পণ্ডশ্রমের বাইরে পড়ে থাকে নিশ্চুপ হা হুতাশ। বেলডাঙার আন্ডিরণ প্রাথমিক স্কুলের এই ‘অশিক্ষনীয়’ পরিবেশটাই আমূল বদলে দিয়েছে ঝরা পাতা। আসুন, শোনা যাক গল্পটা।

স্কুলের এই দুরন্ত বাচ্চাদের অস্থির মনটা চুপি চুপি পড়ে ফেলেছিলেন শিক্ষকেরা। তাই নতুন এক খেলাচ্ছলে পড়ার পরিবেশ তৈরিতে মনোযোগী হয়েছিলেন তাঁরা। ফলও মিলেছিল হাতেনাতে।

—এই দেখে যা দেখি, গাছে ক’টা শালিখ বসে রয়েছে বল দেখি?

গুনে গুনে সক্কলে হইহই করে উঠল, ‘‘সাতটা স্যর!’’

শুরুটা এ ভাবে। তার পরেই

—এই দেখ, দু’টো পাখি উড়ে গেল, এখন ক’টা রে!

যোগ থেকে বিয়োগের এই খেলা ক্রমেই হয়ে উঠল অঙ্ক। ফুল-পাতা-পাখি-হাওয়ার ইংরাজিটাও হয়ে উঠল নতুন নতুন নামের খেলা। স্কুলের এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘এই সময়েই শুরু হল পাতা ঝরা। আমরা ছেলেপুলেদের দিয়ে শুরু করলাম, পাতা কুড়োনোর কাজ। কার ক’টা পাতা হল, সেখান থেকে ওকে দু’টো দিলে থাকল ক’টা। এই পাতার হিসেবে এক দিন যোগ বিয়োগ, এমনকি গুন ভাগেও দড় হয়ে উঠল কেউ কেউ।’’

বেলডাঙার ওই স্কুলের মতোই সুতিঘাটা প্রাথমিক স্কুলেও এ ভাবেই শেখানো হয়েছে গাছ লাগিয়ে অঙ্ক ক্লাশের সহজ নিয়ম। অমনোযোগ সেখানেও হয়ে উঠেছিল মজার মনোযোগ।

আন্ডিরণ স্কুলে পড়ে প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেনির শিশুরা। স্কুলের প্রাথর্না শেষ হলেই তাদের পাতা কুড়ানোর খেলা। স্কুলের মাঝে প্রকান্ড বট গাছ। সেই গাছের পাতা পড়ে অনবরত। সেই পাতা কুড়িয়ে এক জায়গায় আনা হচ্ছে। কে কটা পাতা কুড়োচ্ছে তা গুনে বলতে হচ্ছে। একটি শিশু বোর্ডে লিখছে সেই সংখ্যা। তার পর দুটো ছাত্রের মোট পাতা কত— এই ভাবে যোগের ধারনা দেওয়া হচ্ছে। কে কম, কে বেশি সেই সব ধারনা।

মণীশ দাস সে দিন মোট ৫০ টা পাতা কুড়িয়েছে। রাহুল দাসের সংগ্রহ ৮০ টা। মনিকা ৮১ টা— তিন জনের মোট কত হল রে ? তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে সুবর্না মণ্ডল বলে দিল, ‘‘২১১ স্যর।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্ত বলছেন, ‘‘এটাই বড় ভাল লাগে জানেন। মনে হচ্ছে আমরাও যেন কিছু শিখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education School Mathematics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE