Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নেই পরিকাঠামো, সাধারণ স্কুলে ব্রাত্য অটিস্টিক শিশুরা

সরকারি ভাবে কিছু কিছু সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হলেও বাস্তবের সঙ্গে তার বিস্তর ফারাক। বাস্তব বলছে, অটিস্টিক শিশুরা ন্যূনতম শিক্ষার পরিবেশটুকুও পায় না।

সচেতনতা বাড়াতে পদযাত্রা। কৃষ্ণনগরে। —নিজস্ব চিত্র।

সচেতনতা বাড়াতে পদযাত্রা। কৃষ্ণনগরে। —নিজস্ব চিত্র।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০০
Share: Save:

‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’এ শহরের রাস্তায় হাঁটল নাগরিক সমাজ। আরও পাঁচ জন মানুষকে সচেতন করতে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, অটিজমের প্রচারে এই রাস্তায় হাঁটাটুকুই কি সব?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিস্টিক শিশুদের চাই সামাজিক ভাবে মেলামেশার পরিসর। চাই মুক্ত জানালা। যেখান থেকে তারা বাইরের পৃথিবীকে নিজের দুই হাতের ভিতরে ধরতে পারবে। এই বিশেষ দিনে সেই জরুরি প্রশ্নটিই উঠে এল বার বার। প্রশ্ন উঠছে, আমাদের নাগরিক সমাজ এই সব শিশুকে কতখানি সেই মুক্ত পরিবেশ এনে দিতে পারছে?

সরকারি ভাবে কিছু কিছু সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হলেও বাস্তবের সঙ্গে তার বিস্তর ফারাক। বাস্তব বলছে, অটিস্টিক শিশুরা ন্যূনতম শিক্ষার পরিবেশটুকুও পায় না। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, অর্টিস্টিক শিশুদের স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে বাধ্য। শুধু তাই নয়, স্পেশ্যাল এডুকেটর দিয়ে তাদের বিশেষ ভাবে পড়াশোনার ব্যবস্থাও করতে হবে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কিন্তু বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে অভিভাবকদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। বাকি শিশুদের সঙ্গে স্কুলে অটিস্টিক বাচ্চাদের ভর্তি করাতে গেলে নানা অজুহাতে অভিভাবকদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই তাই মনে করছেন, একদিন পথে হাঁটার পাশাপাশি সারাটা বছর এই ভাবে অটিজম নিয়ে সচেতনতা প্রচার এবং অটিস্টিক শিশুদের পাশে সামাজিক ভাবে দাঁড়ানোটা জরুরি। তাদের শিক্ষার অধিকারের বিষয়ে জোরালো দাবি তোলা অনেক বেশি প্রয়োজন।

নবদ্বীপের আরবিসি সারস্বত মন্দিরে এক জন সপ্তম শ্রেণি ও এক জন নবম শ্রেণির পড়ুয়া অটিস্টিক শিশু। তাদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজনকুমার সাহা বলছেন, “স্পেশ্যাল এডুকেটর মাঝে মধ্যে আসেন। আমাদের শিক্ষকেরাই আন্তরিকতার সঙ্গে ওদের পঠনপাঠনের দিকে নজর রাখেন।” কৃষ্ণনগর কলিজিয়েট স্কুলে প্রাথমিক বিভাগে আছে তিন জন আর সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে আছে দু’জন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলছেন, “ওরা এখন আর তেমন কোনও সমস্যা করে না। কখনও কিছু করলে আমরা সামাল দিয়ে দেই।” আবার, কল্যাণীর পান্নালাল ইনস্টিউশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে তাদের স্কুলে এই মুহূর্তে এমন কোনও পড়ুয়া নেই। বছর চারেক আগে একজন ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু তার বাবা অন্যত্র বদলি হওয়ায় তাকে স্কুল ছেড়ে চলে যেতে হয়।

কিন্তু সব স্কুলের এক অবস্থা নয়। অনেক স্কুলের কর্তৃপক্ষের মধ্যে সেই সচেতনতাই নেই বলে অভিযোগ। করিমপুরের জগন্নাথ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌগত অধিকারী যেমন উল্টে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন— “অটিজম কাকে বলে?” তার পরেই তিনি বলছেন, “lতেমন কোনও অস্বাভাবিক বাচ্চা আমাদের স্কুলে পড়ে না। আগেও কোনও দিন ভর্তি হতেও আসেনি।”

ভিন্ন চিত্র ধরা পড়ে রানাঘাটে। আগে এই স্কুল থেকে দু’জন অটিস্টিক পড়ুয়া মাধ্যমিক পাশ করেছে। এখন দু’জন পড়ছে। পঞ্চম শ্রেণিতে। এই স্কুলে কোনও স্পেশাল এডুকেটর আসেন না। স্কুলের শিক্ষকরাই নিজেদের মতো করে পড়ান। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ বলছেন, “এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের আন্তরিকতাটাই আসল। আর সেটা আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে আছে। সেই কারণেই আমরা সফল ভাবে কাজ করতে পারছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Autism অটিস্টিক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE