Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গির্জার মাঠে সিনেমার পর্দা 

কৃষ্ণনগর রোমান ক্যাথিড্রাল চার্চের বাঁ দিকের মাঠটা ভিড়ে ঠাসা। মাঠের পুব দিকে বিরাট পর্দা টাঙিয়ে হচ্ছে যিশুর জীবনী আধারিত ‘কিং অফ কিংস’ সিনেমাটি। 

 পড়ে রয়েছে সিনেমা দেখানোর যন্ত্রপাতি। নিজস্ব চিত্র

পড়ে রয়েছে সিনেমা দেখানোর যন্ত্রপাতি। নিজস্ব চিত্র

সুদীপ ভট্টাচার্য 
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫৬
Share: Save:

সময়টা ষাটের দশকের শেষ দিক। বছর শেষের এক কনকনে শীতের সন্ধে।

কৃষ্ণনগর রোমান ক্যাথিড্রাল চার্চের বাঁ দিকের মাঠটা ভিড়ে ঠাসা। মাঠের পুব দিকে বিরাট পর্দা টাঙিয়ে হচ্ছে যিশুর জীবনী আধারিত ‘কিং অফ কিংস’ সিনেমাটি।

পর্দার সামনে ত্রিপল বিছানো। সেই ত্রিপলের সামনের দিকে ডনবস্ক আবাসিক স্কুলের শ’দুয়েক কচিকাঁচা। আর তার পিছনে মেলা দেখতে আসা মানুষ। কেউ বসে, কেউ বা দাঁড়িয়ে। মাঠের শেষ মাথায় কাঁঠাল গাছের নীচে একটা বড় টেবিলে দু’টো প্রোজেক্টরে পর্যায় ক্রমে ১৬ মিলিমিটারের ফিল্মের রিল ঘুরছে ঘড়ঘড় শব্দে।

প্রোজেক্টর চালাচ্ছেন হিতেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। ল্যাটিন ভাষায় চলা সিনেমার মূল শব্দটি ভীষণ কমিয়ে রাখা হয়েছে। আর পর্দার পাশে মাইক হাতে প্রফুল্ল মণ্ডল বাংলায় অনুবাদ করে চলেছেন সমস্ত সংলাপ। সিনেমার স্কিনে চরিত্র পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজের গলার স্বরও পাল্টে ফেলছেন প্রফুল্ল। চাদরমুড়ি দিয়ে মাঠভর্তি আট থেকে আশি— সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে শুনছে সেই ধারাভাষ্য।

সে দিনের সামনের সারিতে বসে থাকা সেই ছোট্ট ছেলেদের দলে ছিলেন অগাস্টিন হিমাংশু মণ্ডলও। আজ তাঁর বয়স বাহাত্তর। কাজ করেন চার্চেরই ছাপাখানায়। ফাঁকা মাঠের দিকে তাকিয়ে হিমাংশু বলেন, ‘‘সেই সময় বড়দিনের মেলা মানেই তো ছিল চার্চের মাঠের সিনেমা। কত রকম সিনেমা দেখানো হত! মার্সেলিনো পানিভিনো, কনস্টানটাইন দ্য গ্রেট, খ্রিস্ট্রীয় সাধুদের জীবনী— আরও কত কী!’’ তিনি জানান, সব সিনেমাই চলার সময়ে বাংলায় অনুবাদ করে দিতেন প্রফুল্ল ড্রাইভার।

তবে সিনেমা শুরুর আগে মিনিট পনেরো চার্লি চ্যাপলিন, লরেল হার্ডি বা কয়েকটি কার্টুন চালানো হত। সম্ভবত লোক জড়ো করার জন্য। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ছোটরা সেটা মিস করতাম না কেউই। কিন্তু এখন হিতেন মাস্টার, প্রফুল্ল ড্রাইভার, সিনেমা— সব কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আজকাল বড়দিনের সময় এত জাঁকজমকের মধ্যে সিনেমাটা বড্ড মনে পড়ে।’’ হিতেন্দ্রের ছেলে স্বপন বিশ্বাস এখন চার্চে গাইডের কাজ করেন। তাঁর কাছেই জানা গেল, হিতেন ব্রিটিশ আমলে নিউ এম্পায়ার সিনেমায় প্রোজেক্টর চালাতেন। পঞ্চাশের দশকে বিশপ মরো তাঁকে কৃষ্ণনগর নিয়ে আসেন সিনেমা চালানো আর ইলেক্ট্রিকের কাজ করার জন্য। তিনি শিক্ষকতাও করতেন বলে অনেকেই তাঁকে হিতেন মাস্টার বলে ডাকতেন।

তিনি মারা যান বাহাত্তর সালে।

‘‘মারা যাওয়ার বছর দুই আগেও বাবা সিনেমা চালিয়েছিলেন মাঠে’’— বলেন স্বপন।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar Cathedral Church Cinema Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE