Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ওঁরা দেখাচ্ছেন, এ ভাবেও পাশে থাকা যায়

রাস্তার পাশেই এক ফালি ক্লাবঘরের ভিতর ও বাইরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে হরেক রকম পোশাকের পসরা। পথচলতি লোকজন আসছেন, পরখ করে দেখছেন এবং সেগুলো নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কোনও দরদাম নেই। কারণ, দোকানের নাম—বিনা পয়সার বাজার।

শুভাশিস সৈয়দ ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ইচ্ছে থাকলেই হয় ইচ্ছেপূরণ!

কী করে? জানতে হলে আপনাকে আসতে হবে বহরমপুরের ‘বিনি পয়সার বাজারে’ না হলে যোগ দিতে হবে ফেসবুকে ‘প্রিয় নবদ্বীপ’ গ্রুপে।

রাস্তার পাশেই এক ফালি ক্লাবঘরের ভিতর ও বাইরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে হরেক রকম পোশাকের পসরা। পথচলতি লোকজন আসছেন, পরখ করে দেখছেন এবং সেগুলো নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কোনও দরদাম নেই। কারণ, দোকানের নাম—বিনা পয়সার বাজার। বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ারের পূর্ব পাড় লাগোয়া রাস্তার পাশেই এমজিওয়াইএস ক্লাব। ক্লাব সম্পাদক নির্ভয় বাগচি বলেন, ‘‘ব্যবহারযোগ্য যে সমস্ত পোশাক ছোট হয়ে বাতিলের মুখে বা বাড়তি হয়ে গিয়েছে, পরিচিত-বন্ধু ও অসংখ্য মানুষ সেগুলো স্বেচ্ছায় আমাদের দিচ্ছেন। সেগুলোই সাজিয়ে রাখা হচ্ছে।’’

‘যাঁর প্রয়োজন নেই তিনি দিয়ে যাবেন, যাঁর প্রয়োজন আছে তিনি নিয়ে যাবেন’— এই ভাবনা থেকেই পোশাক রাখা হয়েছে। খুঁটে খাওয়া দরিদ্র লোকজন সে সব পোশাক নিয়ে যাচ্ছেন হাসিমুখে। তবে যাঁরা পোশাক দিতে চাইছেন, তা যেন ছেঁড়া বা অপরিচ্ছন্ন না হয়, সে কথাও ক্লাবকর্তারা সবিনয়ে জানাচ্ছেন। কারণ, পোশাক দেওয়ার সময়ে যেন তাতে অবজ্ঞা মিশে না থাকে। রবিবার ও মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে বিনা পয়সার দোকান। সপ্তাহের সাত দিন-ই যে কেউ পোশাক দিয়ে যেতে পারেন। ক্লাব কর্তা সৈয়দ তৌফিক ইসলাম বলছেন, ‘‘এক বৃদ্ধা এসে পোশাক চান। আমি তাঁকে তাঁর পছন্দমতো যে কোনও পোশাক নিয়ে যাওয়ার কথা বলি।’’

বিদেশে এমন ব্যবস্থা নতুন নয়। এ দেশেও কলকাতা-সহ বেশ কিছু শহরে চালু হয়েছে এমনই বিনি পয়সার বাজার। বহরমপুরের এ বাজারের কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করায় সাড়া মিলেছে ভালই। নবদ্বীপে আবার শিকড়ের টান থেকেই জন্ম ‘প্রিয় নবদ্বীপের’। অ্যাডমিন, ফলোয়ার, পোস্ট, লাইক, কমেন্টস নিয়ে হাজার একটা ফেসবুক গ্রুপের মতো আরও একটি গ্রুপ। নবদ্বীপ নিয়েই কথা এবং কথা কাটাকাটি বিলক্ষণ হয় দেওয়ালে। যদিও সর্তক গ্রুপ অ্যাডমিন বেচাল কিছু দেখলে মাঝে মধ্যে বকাঝকাও করেন। এ ভাবেই চলছিল।

হেমন্ত শেষ হতেই দেওয়াল জোড়া একটি প্রস্তাবে নড়েচড়ে বসলেন সকলে। কমেন্টস, লাইকের বন্যা বয়ে গেল। সেই প্রস্তাবের মোদ্দা কথাটি ছিল—‘আমাদের প্রত্যেকের বাড়ির আলমারিতে এমন অনেক পোশাক থাকে যেগুলোর প্রয়োজন আমাদের কাছে ফুরিয়েছে। সেই পোশাক গুলো সংগ্রহ করে একটা বস্ত্রব্যাঙ্ক করলে কেমন হয়?’ প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন গ্রুপ অ্যাডমিন সুব্রত পাল। দেওয়ালে লাইক, সমর্থনের বন্যা। পাশে থাকার অঙ্গীকার। তবে কাজ শুরু করতে আরও কিছুটা সময় লাগে। পুজোর ঠিক আগে প্রথম বার বস্ত্রব্যাঙ্ক নিয়ে মুখোমুখি বসলেন জনা কয়েক মানুষ। তাঁদের মধ্যে আত্রেয়ী মুখোপাধ্যায়, দেবোত্তম চক্রবর্তী, গোবিন্দ দাস, রীতিময় সাহা-সহ বেশ কয়েক জন। সে দিনের উদ্যোগে সামিল হন নবদ্বীপের সদ্যপ্রয়াত সাংবাদিক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও। জায়গা দিল নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ।

এমন কয়েকটি আলোচনার পরে পোশাক সংগ্রহের দিনক্ষণ ঠিক করে ফের দেওয়ালে পোস্ট। নির্দিষ্ট দিনে প্রচুর মানুষ হাজির হয়ে গেলেন বিপুল সংখ্যক পোশাক নিয়ে। মাত্র তিন দিনের সংগ্রহে উপচে পড়ল পোশাক। দেবোত্তম চক্রবর্তী, সুব্রত পালেরা বলছেন, ‘‘বস্ত্র ব্যাঙ্কের সদস্যরা নিজেরাই ঘুরে ঘুরে সন্ধান আনলেন, কাদের পোশাক দেওয়া হবে। হাত বাড়িয়ে দিলেন বহু মানুষ। জানুয়ারিতে সেই পোশাক তুলে দেওয়া হল প্রায় সাতশো জনের হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Clothing Shop Free
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE