আর পাঁচটা মেয়ের তাঁর লড়াইটা একটু আলাদা।
দিন কয়েক আগে মারা গিয়েছেন বাবা। নিজের গলায় বাঁধা বেঁধেছে মারণ রোগ। এমন অবস্থায় ভেঙে পড়া দূর, নিজেই গিয়ে বসছে বাড়ির মুদি দোকানে। বাবা বলতেন যে, লেখাপড়া করে বড় হতে। তাই প্রথম বর্ষের ছাত্রী রাজেশ্বরী রায়ের প্রথম কাজ, বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করা। লেখাপড়ায় বরাবর ভাল রাজেশ্বরী। বাবা মুদির দোকান চালাতেন। সংসারে আয় ওইটুকুই। কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটছিল। ছোট্ট রাজেশ্বরীর স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সাবলম্বী হয়ে সংসারের হাল ধরবে। সেই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মারণ ব্যাধি। একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় ক্যান্সার ধরা পড়ে তার। ছ’বার কেমো দিতে হয়েছে তাঁকে। উচ্চমাধ্যমিকে ৭১ শতাংশ নম্বর পেয়ে রাজেশ্বরী রানাঘাট কলেজে ভর্তি হয়েছেন। রানাঘাটে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে রাজেশ্বরীর বাবা। মাস সাতেক আগে তাঁর চাকরিটা চলে যায়। তার পর রানাঘাটের উত্তর নাসরায় বাড়িতে মুদির দোকান করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোনোর দিন কয়েক আগে রাজেশ্বরীর বাবা আত্মহত্যা করেন। এখন পড়াশোনার খরচ কে চালাবে, সেই চিন্তা কুরেকুরে খাচ্ছিল তাঁকে।
রাজেশ্বরীর এই লড়াইয়ের কথা জেনে এগিয়ে এসেছে কয়েকটি সংস্থা। রবিবার তাঁর হাতে নগদ টাকা তুলে দেন রানাঘাট এক সংস্থা। রানাঘাটের মহকুমাশাসক প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী জানান, রাজেশ্বরীর বাবা মারা যাওয়ার পর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই কারণে তাঁকে প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। আগে রাজেশ্বরীর পাশে দাঁড়িয়েছিল রানাঘাট শহরের স্বামী বিবেকানন্দ স্মরণী অধিবাসীবৃন্দ। দুর্গাপুজোর বাজেট থেকে টাকা বাঁচিয়ে তারা পঁচিশ হাজার টাকা রাজেশ্বরীর হাতে তুলে দিয়েছিল।
আর রাজেশ্বরী জানিয়েছে,“বাবা স্বপ্ন দেখতেন, আমি লেখাপড়া করে যেন বড় হই। বাবার সেই স্বপ্নপূরণ করাই এখন আমার প্রথম কাজ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy