প্রতীকী চিত্র।
বাড়ির পুজো হোক বা সর্বজনীন, পুজোর সময়ে ফুল আর ফলের দাম বাড়ে প্রতি বছরই। এ বার তো আবার পরিবহণ বন্ধ হয়ে সঙ্কট আরও বেশি। ফলে দামও চড়ছে। এই সময় ফলের মধ্যে কলা, পেয়ারা, আপেল, শসা, শাঁকালু বা নাসপাতি আর ফুলের মধ্যে গাঁদা, জবা বা পদ্মের ব্যবহার বেশি হয়। জেলার কয়েকটি জায়গায় ফুল, কলা কিংবা পেয়ারা চাষ হলেও অন্য ফুল বা ফল বাইরে থেকে আসে। এ বছর রেল চলাচল বন্ধ থাকায় সমস্যা বেড়েছে। শিমুরালি বাজরের ফল ব্যবসায়ী সাধন মণ্ডল জানান, ট্রেন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ভোর তিনি কোনও রকমে হাত-মুখ ধুয়ে এক কাপ চা খেয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান কলকাতার মেছুয়া বাজেরে। সেখান থেকে ফল কিনে তাঁর বাড়ি ফিরতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাঁর কথায়, “অনেক ফল আছে যেগুলো বাইরে থেকে আনতে হয় এবং ট্রেন বন্ধ থাকায় পরিবহন খরচ অনেক বেশি পড়ছে ফল বিক্রেতাদের। তাই গত বছরের তুলনায় এ বার ফলের দাম অনেক বেশি হচ্ছে।”
গাঁদা ফুল এখনই কমবেশি ১০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে। আর জবা ফুল একশো পিস ১০-২০ টাকা। পদ্মফুলের দাম এখনই সে ভাবে কেউ বলতে পারছেন না। ধানতলার ফুল চাষি রঞ্জন বিশ্বাস জানান, সেখানে উৎপাদিত ফুল মূলত কলকাতা ও সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় রফতানি হয়। পুজোর মরশুমে চাহিদা বেশি হওয়ায় ফুলের দাম বাড়ে। চাষিরা কিছু লাভের মুখ দেখেন। কিন্তু এ বছর রেলের বদলে সড়কপথে ফুল বাইরে যাওয়ায় ফুলের দাম বাড়লেও সেই লাভ চাষিরা পাচ্ছেন না।
ধানতলার উত্তরপাড়ার বীরেন মোদক বলেন, “অন্য বছর দুর্গাপুজোর সময়ে এক লক্ষ পদ্মফুল মজুত রাখি। সেগুলো বাঁকুড়া, বীরভুম, ওড়িষা-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে। এ বার পুজো নিয়ে আমরা অনিশ্চিত ছিলাম এবং ক’টা পুজো হবে তা-ও বুঝতে পারছিলাম না। সেই কারণে মাত্র দশ হাজার ফুল মজুত রেখেছি। নতুন আমদানি বেশি না হলে পদ্ম ফুলের দাম পুজোয় একটু চড়া হতে পারে।” করিমপুরের ফুল ব্যবসায়ী বাবলু মিস্ত্রি জানান, এখানে সব ফুলই বাইরে থেকে কিনে এনে বিক্রি করতে হয়। পুজোর সময়ে এক ধাক্কায় সব রকম ফুলের দাম বেড়ে গিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে যে গাঁদা ফুলের দাম ৫০ টাকা ছিল আজ সেই দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, ৪০ টাকার জবা ৫০, পাঁচ টাকা পিস পদ্ম ১২ টাকা হয়েছে। আগামী দুই চার দিনে এই দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফুল ও ফলের জোগান না থাকায় ক্রেতাদের হাত পুড়লেও চাষিরা কিন্তু তেমন দাম পাচ্ছেন না। কালীগঞ্জ এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই পেয়ারা চাষের জন্য বিখ্যাত। কালীগঞ্জের পেয়ারা নানা জেলার বাজারে পৌঁছয়। তবে এই বছর পরিস্থিতি আলাদা। স্থানীয় পেয়ারা চাষি কালামউদ্দিন শেখ বলেন, “এনআরসি-র হাওয়া ওঠার পর থেকেই এলাকায় ট্রেন বন্ধ। সেই ফলের দাম কমতে লাগে। তার পরেই তো এল করোনা। তবে এখন পেয়ারা বাজারে পাঠাতেই প্রচুর খরচা পড়ে যাচ্ছে। যায় ফলে মার খেতে হচ্ছে আমাদের মতো চাষিদের। গত বার এই সময়ে পেয়ারা বিক্রি হয়েছে ২২-২৫ টাকা দরে, সেই বাজার এইবছর ১০-১২ টাকায় নেমেছে।” এ বার পুজো যে ফুলে-ফলে ভরে উঠবে না, বোঝাই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy